South east bank ad

খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ কোটি টাকায়

 প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ কোটি টাকায়

ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে ৮৩৯ কোটি ৫২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বড় অংকের সঞ্চিতি ঘাটতিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে এনবিএফআইটির টিকে থাকার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। জিএসপি ফাইন্যান্সের সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিরূপ মতামত দিয়েছেন নিরীক্ষক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিরীক্ষকের মতামত অনুসারে, ২০২৪ হিসাব বছরে জিএসপি ফাইন্যান্সের ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে সংরক্ষিতব্য সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১০ কোটি ৮১ লাখ টাকায়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৩৩৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। এ সময়ে সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৪ কোটি ২৯ লাখ টাকায়। সঞ্চিতি ঘাটতি সমন্বয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে পাঁচ বছর সময় পেয়েছে।

জিএসপি ফাইন্যান্সের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি জিএসপি ইনভেস্টমেন্টসের বিষয়ে নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছেন, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটির মার্জিন ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ৩৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২৫৪ জন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীকে এ ঋণ দেয়া হয়েছে এবং এর পুরোটাই ঋণাত্মক ইকুইটি হয়ে গেছে। মার্জিন ঋণধারী অ্যাকাউন্টের বর্তমান বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে ক্ষতির কারণে ৩৬২ কোটি ৭১ লাখ টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও জিএসপি ইনভেস্টমেন্টস মাত্র ৬০ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। ৩০২ কোটি ৭০ লাখ টাকা সঞ্চিতি ঘাটতির কারণে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটির ইকুইটির অতিমূল্যায়ন এবং লোকসানের অবমূল্যায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

জিএসপি ফাইন্যান্সের বিভিন্ন আর্থিক সূচকে অবনতির কারণে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির টিকে থাকার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। বড় অংকের খেলাপি ঋণ ও সঞ্চিতি ঘাটতি, ঋণাত্মক গ্রস মুনাফা ও নিট মুনাফা মার্জিন, বড় অংকের লোকসান, তহবিল ঘাটতি এবং নেগেটিভ ইকুইটির মতো বিষয়গুলো কোম্পানিটির ভবিষ্যতে টিকে থাকার সক্ষমতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরে জিএসপি ফাইন্যান্সের কর-পরবর্তী ১৮৫ কোটি টাকা নিট লোকসান হয়েছে, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১৫২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ টাকা ৭৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৯ টাকা ৬৭ পয়সা। ২০২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করেনি জিএসপি ফাইন্যান্সের পর্ষদ।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে চলতি ২০২৫ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) জিএসপি ফাইন্যান্সের কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ১৬ পয়সা। এ বছরের ৩০ জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নিট দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ পয়সায়। গত জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে ৮৮২ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯ টাকা ৭৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৮ পয়সা।

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৫ পয়সায়।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৮ পয়সা। আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৭৮ পয়সায়।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্সের পর্ষদ। এর মধ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ ও ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৪৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৩৫ পয়সায়।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। আগের হিসাব বছরে ১৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিএসপি ফাইন্যান্সের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৫৭ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৫। এর ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৭ দশমিক ৯৪ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৫০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ার সর্বশেষ ২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ২ টাকা ৭০ থেকে ১১ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: