South east bank ad

চাকরি জীবনে কারও দুঃখ-কষ্টের কারণ হইনি: ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার

 প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   পুলিশ

চাকরি জীবনে কারও দুঃখ-কষ্টের কারণ হইনি: ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

দীর্ঘ ৩৩ বছরের চাকরি জীবনের ইতি টানলেন সদ্য বিদায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাতে রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক আড়ম্বর সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় জানান ডিএমপির সব স্তরের পুলিশ সদস্যরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী কমিশনারের সঙ্গে দীর্ঘ কর্মজীবন অতিবাহিত করার স্মৃতিচারণ করেন টিম ডিএমপির সদস্যরা।

এসময় সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভালো কাজের জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, জবাবদিহি করতে হয় মন্দ কাজের জন্য। আমরা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে জানি না। মানুষের কাজের জন্য কৃতিত্ব দিতে আমরা কুণ্ঠিত বোধ করি। সহকর্মীদের ওপর নিজের বীরত্ব জাহির করিনি। যার যার কাজের জন্য তাকে প্রশংসিত করেছি। আরেকজনের অর্জনকে নিজের অর্জন বলে ছিনিয়ে নেইনি। চাকরি জীবনে কারও জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হইনি।

তিনি বলেন, মানুষ যেন পুলিশ দেখে আতঙ্কিত না হয়, মানুষ যেন পুলিশ দেখে আশ্বস্ত হয়- এমনভাবে কাজ করেছি। আল্লাহ বলেছেন মজলুম ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না, একজন মজলুম যখন কষ্ট পেয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন তখন সেটা কবুল হয়ে যায়। তাই আমরা এমনভাবে কাজ করবো যেন, মানুষ অত্যাচারিত হয়ে পুলিশের কাছে আসার পর তাদের অত্যাচারের বোঝা আমরা আরও বাড়িয়ে না দেই। যখন মানুষের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ থাকে, সময় থাকতে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

কেননা আমরা কেউই একসময় থাকবো না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যেসব পুলিশ সদস্য ছিল, তারা ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন তাদের জন্য যেন আমরা কিছু করতে পারি। তাদের অবদান যেন ভুলে না যাই।’

ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার আরও বলেন, আমরা রাতের পর রাত ঘুমাই না, রাস্তায় পাহারা দেই। আমরা যদি এমনিভাবে পাহারা না দিতাম তাহলে হাজার হাজার অপরাধ হতো। চাকরি জীবনের সবসময় চেষ্টা করেছি যাতে মানুষের কাছ থেকে শুনতে পারি পুলিশ আমার জন্য চেষ্টা করেছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ রইলো আপনারা আপনাদের চাকরি জীবনে এমনভাবে কাজ করবেন যাতে মানুষ বলে যে পুলিশ আমাদের জন্য চেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করি- তাহলে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।

মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা চাকরি জীবনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দিকে তাকিয়ে আমাকে যে সহযোগিতা করেছেন- আমি ও আমার পরিবার আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। দেশের প্রয়োজনে, পুলিশের প্রয়োজনে যে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত থাকবো। সহকর্মীদের বলবো আপনাদের যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, যেকোন সময় নিঃসংকোচে আমাকে জানাবেন। আমার সাহায্যের দ্বার আপনাদের জন্য খোলা রইলো। যেকোন প্রয়োজনে আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকবো।

সবশেষে বিদায়ী কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সবাইকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। আপনাদের এ ভালোবাসা যেন আমার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি। আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে ৮ম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪তম কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি এএসপি হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, খাগড়াছড়ি জেলা ও মৌলভীবাজার জেলায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে খাগড়াছড়ি জেলা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

এরপর তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে ৭ এপিবিএন-পটুয়াখালী জেলা, ২ এপিবিএন-সুনামগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

মোহা. শফিকুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি পদন্নোতি প্রাপ্ত হয়ে অ্যাডিশনাল আইজিপি হিসেবে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, ঢাকায় যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর অ্যাডিশনাল আইজিপি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এবং সর্বশেষ তিনি ২০১৯ সালের ১৬ মে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার নওদাবন্ড বিল দোয়ারপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। তার বাবা মো. শওকত আলী ও মা বেগম সুফিয়া খাতুন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।

BBS cable ad

পুলিশ এর আরও খবর: