ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টেলিটকের ৫-জি
বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় চালু হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের ৫-জি সেবা। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ই-সেবার গতি বর্তমানে চালু থাকা ৪-জির চেয়ে ১০ গুণ বেশি। ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। ফলে নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যে কোনো টেলিযোগাযোগ আরও সহজ করবে টেলিটকের ৫-জি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্কে ৫-জি প্রযুক্তি চালুকরণ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গ্রাহক পর্যায়ে ৫-জি নেটওয়ার্কের সুবিধা সম্পর্কে আগ্রহ এবং সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের মোবাইল অপারেটরগুলোকেও দেশব্যাপী ৫-জি সেবা চালু করার বিষয়ে উৎসাহিত করা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। ২০২৩ সালের মধ্যে ৫-জি সেবা চালু করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতির পরিপালন হবে।
প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পটির সেবা কার্যক্রম চালু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ কারণে প্রাথমিকভাবে বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বনানী, গুলশান, উত্তরা ক্যান্টনমেন্ট থানা, শেরেবাংলা নগর এবং মোহাম্মদপুর এলাকাকে ৫-জি সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। একই বিবেচনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাধীন মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানার সরকারি ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো টেলিটকের ৫-জি সেবা পাবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উত্থাপন করা হবে। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৭ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, গত বছরের আগস্টে একনেকে অনুমোদিত 'গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদান নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন' নামে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ওই প্রকল্পে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সারাদেশে ৫-জি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালুর উদ্দেশ্যে টেলিটকের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করার কথা রয়েছে। তবে দুই বছরের সময়সীমার মধ্যে সারাদেশে টেলিটকের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের স্বার্থেই প্রাথমিকভাবে রাজধানীর নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এখন ৫-জি চালু করতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ৫-জি গতির ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক পর্যায়ে রাজধানীর কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ সেবা চালু করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ৫-জি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে এবং আগ্রহ তৈরি হবে। এতে বেসরকারি খাতের মোবাইল অপারেটরগুলোও দেশব্যাপী ৫-জি সেবা চালুর বিষয়ে উৎসাহিত হবে।
জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- রাজধানীতে টেলিটকের ৪-জি সমৃদ্ধ ২০০টি বিটিএসে (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) ৫-জি প্রযুক্তির টেলিকম যন্ত্রাংশ সংযোজন, টাওয়ার কক্ষ এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার। অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সংশ্নিষ্ট বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, টেলিটকের ভাড়াভিত্তিক প্রস্তাবিত ২০০টি সাইটে উচ্চগতির লাস্টমাইল ট্রান্সমিশন স্থাপন, এক লাখ গ্রাহক ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যাটফর্ম স্থাপন ও বিদ্যমান নেটওয়ার্ক সিস্টেমের প্রয়োজনীয় সংস্কার।