ঝালকাঠির বাজারে তরমুজের গায়ে আগুন কেজি দরে বিক্রি দাম বাড়ানোর কৌশল
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
রোজার সময় ফলের কদর বাড়ে। ফল ছাড়া ইফতার কল্পনাই করা যায় না। এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হলেও পরিপক্ব না হওয়ায় বাজারে এখনও আসেনি চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমী ফল। ফলে বাজারে থাকা গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজের ওপর ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকায় সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। গত এপ্রিলের শুরুতে যে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল এখন তা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। মৌসুমের শুরু থেকেই তরমুজের দাম চড়া। তবে রমজান আর বৈশাখের খরতাপকে কেন্দ্র করে সবুজ তরমুজেও আগুন লেগেছে। যে আগুনে নিম্মমধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তরাই পুড়ে ছারখার। অথচ দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহে ইফতারের প্রধান উপকরণ হওয়ার কথা তরমুজ। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই তরমুজ এখন জেলা শহরসহ সর্বত্রই কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সুযোগে বিক্রেতাদের মুনাফা চরমে। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজের দাম চলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বেশি ভালো মানেরগুলো ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের জন্য ক্রেতার গুণতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা! অথচ এই তরমুজের দাম ৬০/৭০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। প্রতিটি তরমুজ কমপক্ষে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে! ক্রেতারা মনে করেন, কেজি দরে বিক্রির কারণেই এমন দাম উঠেছে। তরমুজ যতই ছোট হোক না কেন ৪কেজি ওজনের নীচে কোন সাইজ নেই। এতো ভারী একটি ফল ছোট পরিবারের জন্য কিনতে গেলেও ৫ কেজির নিচে হয় না।
জনসাধারনের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এতো দাম হাঁকানো তরমুজের উৎপাদক প্রান্তিক চাষিরা কেমন দাম পাচ্ছেন? তারা পাইকারি বিক্রেতা বা আড়তদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করায় কি আজ তরমুজের বাজারে আগুন? তারাও কি ব্যবসায়ীদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করেন? চাষিরাই জানিয়েছেন, ক্ষেত থেকে তোলা তরমুজ তারা কেজিতে বিক্রি করছেন না। শ’ হিসেবে বিক্রি করেন বেশিরভাগ চাষি। তবে ভোক্তাদের কাছে কেন এই পণ্য কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে?
চাষি শামছুল আলম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে স্থানীয়ভাবে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ পাইকারদের কাছে শ’ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে বিক্রি করলে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে তরমুজ চলছে।’ আরেক তরমুজ চাষি মজিবুর রহমান মিন্টু জানান, আড়তদারদের কাছে ৪কেজি ওজনের তরমুজ সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন তারা। ১০০ টাকায় যে তরমুজ বিক্রি হয় তার ওজন ৭-৮ কেজি হয়। আড়তদারদের কাছে এই দামে তরমুজ বেচেই অনেক লাভবান তারা। পরিবহন খরচের অজুহাতে সিন্ডিকেট ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা বেশি লাভবান হতে এমন দর বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাষিরা যদি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করতে পারে তাহলে দাম অনেক কম হবে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে অনেকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। পরিবারের জন্য প্রিয় ফলটি না কিনতে পেরে হতাশায় ভুগছেন। মৌসুমি এই ফলটির পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রিকে ভোক্তাদের সঙ্গে বড় রকমের প্রতারণা ও চালবাজি আখ্যায়িত করছেন। কেজিদরে তরমুজ কিনতে চাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ ‘আঙুর ফল টক’ উপকথার মতো তরমুজ বয়কটের শ্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু ক্রেতাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ও ভালো ফলন না হওয়ার অযুহাত দেখাচ্ছেন তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচন্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা। ‘লকডাউনের’ কারণে দেশের বেশির ভাগ তরমুজ উৎপাদন হওয়া বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ আসতে পারছে না। এজন্য দাম বেশি। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তরমুজের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে এর আকার অনুযায়ী। তিন বছর আগেও একটি ছোট আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত) গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি) ৮০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বড় সাইজের তরমুজ (১০ কেজি থেকে আধা মণ বা তারও বেশি ওজনের) ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তবে ইদানীং দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশেষত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপার শপগুলোতে তরমুজ কেজিতে বিক্রির চল শুরু হয়। সে হিসেবে, গত বছর বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে মাঝারি বা বড় আকৃতির তরমুজ ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবারে এর দাম আকাশ চুম্বি।