জুলাইয়ে ব্যাংক লেনদেন কমেছে দেড় লাখ কোটি টাকা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাবে জুলাই মাসে দেশজুড়ে নেমে আসে এক অস্থির পরিস্থিতি। ঐ মাসে দেশের ব্যাংকিং লেনদেন কমে যায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। আন্দোলন দমাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে; যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে স্থবির করে তোলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, জুলাইয়ে ব্যাংকিং লেনদেনের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা, যা ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশের সমান।
দেশে চেক, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে চেক, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন।
গত ১৭ জুলাইয় রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট শাটডাউন ছিল, যেখানে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। ইন্টারনেট সেবা ফিরলেও তার গতি ছিল একেবারেই ধীর।
এছাড়া ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয় এবং ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যার ফলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও, তা যথেষ্ট প্রভাব ফেলে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমার ওপর। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপগুলোই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের পতনের প্রধান কারণ।
দেশের মোট ব্যাংক লেনদেনের বড় অংশ হয়ে থাকে চেকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাইয়ে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২ কোটি টাকা, যা জুন মাসে ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে চেক লেনদেনে হ্রাস ঘটেছে ৫২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, বা ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
চেকের পরই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জুলাইয়ে এমএফএসের মাধ্যমে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা জুনে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এই ক্ষেত্রে এক মাসে লেনদেন কমেছে ৩২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, যা ২১ দশমিক ১২ শতাংশের সমান।
ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুলাইয়ে লেনদেনের পরিমাণ ৮২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যেখানে জুনে ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ফলে এক মাসে লেনদেনে কমেছে ২১ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, বা ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমেও জুলাইয়ে লেনদেন কমেছে। জুলাইয়ে এটি ছিল ৭৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, জুনে ৯৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ২০ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা, বা ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুলাইয়ে লেনদেন হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, যেখানে জুনে ছিল ৭৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। ফলে এক মাসে কমেছে ৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা, যা ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রেও পতন ঘটেছে। জুলাইয়ে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ৩৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ৪৭ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, বা ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে জুলাইয়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা, যেখানে জুনে ছিল ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এই ক্ষেত্রেও কমেছে ৩৯৮ কোটি টাকা, যা ১৩ শতাংশ।