রসিক নির্বাচন আজ, নিরাপত্তায় সাড়ে ৫ হাজার সদস্য
দ্বিতীয় বারের মতো বৃহষ্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল আটটা থেকে রংপুর সিটিতে ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে। ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার পর দ্বিতীয় ভোট হচ্ছে এবার। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও এবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে।
গত এক মেয়াদে রংপুর সিটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসা সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু এবারও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। গত নির্বাচনে ঝন্টুর কাছে পরাজিত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা প্রথম নির্বাচনে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন। এ তিনজন ছাড়া আরও চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন-বাসদের আবদুল কুদ্দুস(মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু(হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম)এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতী)।
এই সিটি করপোরেশনের ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রংপুর সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৫৬, মহিলা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১৯৩। ভোটকক্ষ ১১৭৮টি। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ৩ হাজার ৫৫৯ জন।
নিরাপত্তায় সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নিরাপত্তায় ৫ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিজিবি ২১ প্লাটুন (৬৩০ জন), র্যাব ৩৩ টিম (৪০০ জন), পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে ৪ হাজার ৪৭০ জন। এছাড়া একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল থেকে নগরীতে বিজিবির সদস্যরা টহল শুরু করেছেন। মাঠে আছেন ৩৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। এদিকে নির্বাচনী মাঠে নামছেন নির্বাচন কমিশনের ১১টি ‘নীরব পর্যবেক্ষক’ দল। ইসির নিজস্ব এসব কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
মাঠে নেমেছে বিজিবি: নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত তারা নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন।
১৯৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ: এ সিটি নির্বাচনে ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রিটার্নিং ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হবে।
এক কেন্দ্রে ইভিএম: ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্রে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এটি হলো নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪১ নম্বর কেন্দ্র সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের ছয়টি বুথে ইভিএমে ভোট দিতে পারবেন ২ হাজার ৫৯ জন ভোটার। গতকাল পর্যন্ত ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তিন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা: ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এরমধ্যে তিনটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো-২০ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লায়ন্স স্কুল অ্যা- কলেজ কেন্দ্র এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র।
নির্বাচন সামগ্রী কেন্দ্রে গেছে বুধবার: রিটানিং ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বুধবার থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সামগ্রী ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
যান চলাচলে কড়াকড়ি : নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল ও সব ধরণের ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ভোটের পরদিন শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করবে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।