South east bank ad

ঢাকার রাস্তায় ‘ব্যালেরিনা’

 প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   বিনোদন

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে রেনেসাঁর সময়ে নাচের একটি ধরন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে নাচের এই অনন্য কৌশল।

মূলত এটি একটি নৃত্য ও নৃত্যকলা কৌশলের এক সমন্বিত রূপ। ব্যালেতে নাচ, মূকাভিনয়, অভিনয় ও সংগীতের (কণ্ঠ ও যন্ত্র) সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয় শিল্প। ব্যালে এককভাবে বা অপেরার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অভাবনীয় শারীরিক কৌশলের সঙ্গে সংগীতের এক অপূর্ব মিলন দেখা যায় এতে।

রাজধানীর বুকে এই ব্যালে নাচের সময় এক তরুণীর কিছু ছবি মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আলোচনার কেন্দ্রে। ফেসবুকে নাচের বিভিন্ন ভঙ্গির ছবিতে মুগ্ধ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। শেয়ার হচ্ছে দেদার।

ছবিগুলো দৈনিক বাংলার নজরে এসেছে। ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে। ওই শিল্পীর নাম মুবাশ্‌শীরা কামাল ইরা। একজন ফটোগ্রাফার তুলেছেন ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ছবিগুলো। তার নাম জয়িতা তৃষা।

দৈনিক বাংলাকে ইরা বলেন, ‘আমি তৃষার মডেল। গত ২৩ জানুয়ারি ছবিগুলো তোলা। দুই দিন পর গত ২৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড হয়। সেদিন থেকে তৃষার সঙ্গে আমিও আলোচিত।’

ছবির নিচে নেটিজেনরা ব্যাপক কমেন্ট করছেন। প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ছবির কারিগরকে। বাদ যাচ্ছেন না মডেলও।

দৈনিক বাংলার কথা হয় তৃষার সঙ্গে। তার কাছ থেকেই ইরার সন্ধান মেলে।

তৃষা বলেন, ‘আমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এসএসসির পর ঢাকায় আসি। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা ও অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা করি। চার বছর ধরে ফটোগ্রাফি করছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত ফ্যাশন হাউসে ফটোশুট করি।

‘আমি মূলত পোর্ট্রেট ছবি তুলি। ভিন্ন কিছুর চিন্তা করতাম। ঢাকার রাস্তায় ব্যালে নাচ পরিবেশনের পরিকল্পনা হঠাৎ মাথায় আসে। নাম দিই ‘ব্যালেরিনা’। ইচ্ছা আছে ঢাকার আইকনিক জায়গাগুলোর সামনে ব্যালে নাচ অবস্থায় শিল্পীর ছবি তুলব।’

তৃষা আরও বলেন, ‘ইনস্টাগ্রামে অনেক ফটোগ্রাফারদের কাজ ফলো করি। সেখানে দেখি অনেকেই ব্যালে নাচটাকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলে। ব্যালে চমৎকার একটা নাচের ফর্ম। বিদেশে দেখবেন অনেকেই ব্যালে নাচ শিখছে বা রাস্তায় এই নাচ করছে। বাচ্চারাও করে, দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।’

বছরখানেক আগে এই পরিকল্পনা করেন জানিয়ে তৃষা আরও বলেন, ‘এমন কাউকে খুঁজছিলাম যার সাহায্যে কাজটা করতে পারব। ৫-৬ মাস আগে ফেসবুকের একটি গ্রুপে ইরার সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার কাজ আর আইডিয়া শেয়ারে সে রাজি হয়ে যায়।’

তৃষার পর কথা হয় ইরার সঙ্গে। দৈনিক বাংলাকে ইরা বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে নওগাঁয় থাকি। তৃষার সঙ্গে কাজ করার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। তিন মাস আগে কাজ শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডির রাস্তায় কিছু ছবি তোলা হয়েছিল।’

এ প্রসঙ্গে তৃষা বলেন, ‘ওই কাজটি করে ভুলগুলো ধরতে পারি। সে কারণে আরও প্রস্তুতি নিই। পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিই।’

তৃষা আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি সকালে বের হই আমরা। ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় ঠিকমতো কাজটা হচ্ছিল না। এই হর্ন বাজছে, চিৎকার, হাসি চলছেই। কিন্তু উপায় নেই। এসবের মধ্যেই ছবিগুলো তুলেছি। এর জন্য ইরাকে ধন্যবাদ। চারপাশের সবকিছু পাশ কাটিয়ে ও ঠিকই ফোকাস ধরে রেখেছিল।’

ইরাকে নিয়ে আরও কাজ করার ইচ্ছা জানিয়ে তৃষা বলেন, ‘ব্যালেরিনা’ নামের এই প্রজেক্ট চালিয়ে যাব।’

ইরা বলেন, ‘আমার আসলে জিমন্যাস্টিকস ভালো লাগে। আমার ইচ্ছা জিমন্যাস্টিকসের স্ট্রেন্থ এবং ব্যালে নাচের ফ্লেক্সিবিলিটি মিশিয়ে কাজ করা।’

মজার বিষয় হলো, ইরা এসব শিখেছে ঘরে বসেই। ইউটিউব তার শিক্ষক। অনুপ্রেরণা মা। এখন ঢাকায় মাঝেমধ্যে পারফরম্যান্স করেন।

ইরা বলেন, ‘প্রথম দিকে বাবা রাজি হতেন না। মা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। কিছুটা এগোতে পেরেছি দেখে বাবাও তার জায়গা থেকে সরে এসেছেন।’

এমন নানা গল্পের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে তৃষা-ইরার যুগলবন্দি। ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে দারুণ কিছুর অপেক্ষায় থাকবে সংস্কৃতিমনারা।

তৃষার ক্যামেরা ফ্রেমে ইরার ফ্লেক্সিবল মেশানো নাচের মুদ্রা তাক লাগিয়ে দিয়েছে নেটদুনিয়ার মানুষদের।

BBS cable ad

বিনোদন এর আরও খবর: