চিংড়ি রফতানি বাড়লেও এক যুগ আগের তুলনায় অর্ধেক

এক যুগের বেশি সময় ধরে চিংড়ি রফতানি ক্রমেই নিম্নমুখী হলেও সমাপ্ত অর্থবছরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ১৩১ টন, যার বাজারমূল্য ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩ হাজার ২৩৮ টন চিংড়ি রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যার বাজারমূল্য ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে রফতানি ৪ হাজার ১০৭ টন ও রফতানি মূল্য বেড়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তবে এক যুগ আগে রফতানির পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার টন। এ হিসাবে বর্তমানে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।
রফতানিকারকরা বলছেন, দেশে হেক্টরপ্রতি চিংড়ির উৎপাদন কম যাওয়া, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও বিশ্বব্যাপী ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০৮ সালের পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দাম কমে যাওয়া ও বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বাড়তে থাকায় দেশে উৎপাদিত বাগদা বা গলদা চিংড়ির চাহিদা কমতে শুরু করে। তবে সমাপ্ত অর্থবছরে রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও বৈশ্বিক নানা সংকটের কারণে এ খাতে এখনই খুব বেশি সম্ভাবনা দেখছেন না দেশের রফতানিকারকরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ৫০ হাজার টন চিংড়ি রফতানি হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে ১৩ বছরের ব্যবধানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩ হাজার ২৩৮ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারে। অর্থাৎ ১৩ বছরের ব্যবধানে চিংড়ির রফতানি কমেছে প্রায় ২৬ হাজার ৩৬২ টন বা ৫২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং রফতানি মূল্য কমেছে ২০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রফতানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল চীন। দেশটিতে প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলারে ৪ হাজার ৪৪৬ টন চিংড়ি রফতানি করা হয়। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে ৩ হাজার ৭১৭ টন, ইংল্যান্ডে সাড়ে ৪ কোটি ডলারে ৩ হাজার ৫২৬ টন, বেলজিয়ামে ৪ কোটি ডলারে ৩ হাজার ১৪৭ টন চিংড়ি রফতানি করা হয়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মৎস্য-জাতীয় পণ্য রফতানির সিংহভাগই বাগদা চিংড়ি। তবে দেশে ভেনামি জাতের চিংড়ি সেভাবে উৎপাদন না হওয়ায় রফতানিতে পিছিয়ে পড়েছি আমরা।’
গত অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি কিছুটা বাড়লেও তা আশাব্যঞ্জক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রফতানি বাড়াতে আরো কাজ করতে হবে। নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সরকারকেও এ খাতের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
বিএফএফইএর সভাপতি জানান, বর্তমানে বিশ্ববাজারে বাগদার চেয়ে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ জাতের চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও ২০১০ সালের আগে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি কারখানা কাঁচামালের অভাবে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে দেশে চিংড়ি চাষের উপযোগী জমি রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ হেক্টরে চাষ হয় বাগদা, গলদা ও চাকা চিংড়ি। অন্যদিকে হিমায়িত মাছ রফতানি খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪০টি। এসব কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা চার লাখ টনের বেশি। যদিও বর্তমানে মাত্র ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান সরাসরি রফতানি করছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।
রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এমইউ সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি। অথচ আমরা বাগদা নিয়েই পড়ে আছি। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতে হলে ভেনামি চিংড়ি রফতানির কোনো বিকল্প নেই।’ এজন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।