বন্যায় পোল্ট্রি শিল্পে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি
ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পোল্ট্রি খামারিদের ক্ষয়ক্ষতি অবহিত ও পুনর্বাসনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। রোববার সকালে ফেনী ফুড গার্ডেন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি দাবি পেশ করেন পোল্ট্রি খামারিরা।
ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল আলম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও পোল্ট্রি খামারিরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০ আগস্ট থেকে প্রায় ১০ দিন ভয়াবহ বন্যায় সমগ্র ফেনী জেলা পানিতে তলিয়ে ছিল। বন্যায় ফেনীতে প্রায় ৮০ ভাগ পোল্ট্রি খামার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ২০ ভাগ খামার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ৯০ এর দশক থেকে ফেনীতে পোল্ট্রি খামারের উৎপাদন শুরু হয়ে বর্তমানে ফেনী জেলায় প্রায় ছোট বড় ৫ হাজার খামারি পোল্ট্রি মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে আসছেন। পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে ফেনী স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরবরাহ করে থাকে। ফেনী পোল্ট্রি শিল্প দেশীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও এ শিল্পের ওপর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ধ্বংসপ্রায় পোল্ট্রি শিল্পে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া পুনরায় উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব না। জেলার ৫টি উপজেলায় সবমিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জমা দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেলায় প্রতিদিন মোট পোল্ট্রির মাংস উৎপাদন হয় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার কেজি, ডিম উৎপাদন হয় প্রায় পাঁচ লাখ পিস। এই উৎপাদন ফেনীর চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। এ বিশাল উৎপাদনকে ধরে রাখতে না পারলে নিশ্চিত দেশে ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধি পাবে এবং বিশেষ করে ফেনী অঞ্চলের মানুষকে অন্য এলাকার তুলনায় বেশি দামে ক্রয় করতে হবে। এ সময় ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পোল্ট্রি খামারি ও ডিলারদেরকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরে যেতে সরকারের সহযোগিতার দাবি করেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক খামারি ও ডিলারকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ সহযোগিতা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও ডিলারদের চলমান ঋণের সুদ ও কিস্তি ২ বছরের জন্য স্থগিত করা, ক্ষতিগ্রস্থ খামারি ও ডিলারদের অন্তত ২ বছর মেয়াদি সহজ শর্তে সুদবিহীন ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা, খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই এলাকায় আগামী এক বছর বিনা লাভে বাচ্চা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, বিগত সরকারের সময়ে সামগ্রিকভাবে খাদ্য ও ঔষধের মূল্য ৫০-৭৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে; এ জন্য একটি কমিশন গঠন করে খাদ্য ও ঔষধের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা, বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক করে এই প্রথা রহিত করে সারাবছর দিনের বাচ্চার চাহিদা বাড়লে বাচ্চার মূল্য দ্বিগুণ, তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি একই মূল্যে বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি তোলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর ছয়টি দাবি সম্বলিত স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।