আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে সামনের মাসে সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশে আসছে। এ বছরের ৬-১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে অবস্থান করবে আইএমএফের মিশন। এ মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী জুনে বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করবে আইএমএফ। মুদ্রা বিনিয়ম হারকে আরো নমনীয় করতে এবারের মিশনে ডলারের দাম আরো বেশি বাজারভিত্তিক করার জন্য আইএমএফ মিশনের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এবারের মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশে সংস্থাটির তিনটি মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারের মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী জুনে আইএমএফের পর্ষদে বাংলাদেশের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের প্রস্তাব উঠবে। পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে দুই কিস্তি মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে।
এর আগে গত বছরের ৩-১৮ ডিসেম্বর ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে যায়। এ মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফের পর্ষদে বাংলাদেশের ঋণের চতুর্থ কিস্তির প্রস্তাব উঠার কথা থাকলেও পরে সেটি পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হয়। তবে ঋণ কর্মসূচির আওতায় কিছু শর্ত পরিপালনে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হওয়ার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের সময় পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ এ বছরের জুনে শর্তপূরণ সাপেক্ষে একসঙ্গে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে সম্মতি দেয়।
গত বছরের ডিসেম্বরে আইএমএফের মিশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও জানিয়েছিলেন যে ঋণের কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করা সংক্রান্ত শর্ত পূরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই শর্ত পূরণের পরই তারা আইএমএফের পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। এরপর আইএমএফ পর্ষদ অনুমোদন করলে ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের মিশনেও বিনিময় হার আরো নমনীয় করা এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আইএমএফের পক্ষ থেকে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। যদিও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে—এ শঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে চাইছে না। তবে আইএমএফ বলছে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে যদি ডলারে দাম বেশ বেড়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশকে ঋণ কর্মসূচির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বছরের মে মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে না কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হলে আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তারা।