South east bank ad

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স কী করছে?

 প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স কী করছে?

দেশে কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আগস্ট মাসেও বাজারে বেশিরভাগ সবজি কেনা যেত ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এখন একশ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। দিনদিন নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রাস্কফোর্স গঠন করলেও কোনো ফল মিলছে না। বাজারে দ্রব্যমূল্য কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম কমাতে সরকার এরইমধ্যে কিছু পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না।

যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে অনেক ফসল ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তবে বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার ব্যবস্থা রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত টাস্কফোর্স বিভিন্ন কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাজারে অভিযান পরিচালনা, অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি হিসেবে জরিমানা করা, ট্রাকে করে আলু, পেঁয়াজ, ডিম ও কাঁচা পেপের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য সুলভমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পৌছে দেওয়া।

এদিকে, রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে সরকার। স্থানগুলো হলো- খাদ্য ভবন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর-১০, বাসাবো, বসিলা, রায়ের বাজার, রাজারবাগ, মুগদা-উত্তর, মুগদা-দক্ষিণ, পলাশি মোড়, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, বেগুনবাড়ী, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরা ও ঝিগাতলা।

অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী সাইফ ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ভোক্তা অধিদফতর বাজারে অভিাযান চালাচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। আমার মতে, অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা না করে কিছুদিনের জন্য জেলে নিয়ে রাখা উচিত। একদিক দিয়ে জরিমানা করে যায়, অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে জরিমানার টাকা তুলে নেয়। তাহলে সেই জরিমানা করে লাভ কী হলো?

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি। নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৭ টাকা বেশি মূল্য বিক্রি হচ্ছে ডিম। খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকার বেশি দামে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ অন্য আরো কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজিই ১০০ টাকার ওপরে। বাজার অভিাযান চালানো হলেও সবজির দাম কমছে না।

ডিম ব্যবসায়ী লিটন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে ডিমের দাম কীভাবে কমবে? আমরা কিনে বিক্রি করব তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিম আমাদের কাছে বিক্রি করা হয় এক দামে; আর রশিদে তোলা হয় ভিন্ন দাম। কারণ, ডিম সমিতি আমার কাছে বেশি দামে বিক্রি করে রশিদে কম লিখে রাখে।

সবজি ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুস ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, কিছুদিন আগে বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণে বাজারে কাঁচামালের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে বাজারে সবকিছুর দাম চড়া।

সাধারণ ক্রেতারা জানান, বন্যার কারণে সবজির দাম বেড়েছে, কিন্তু আলু কেন ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে? ব্যবসায়ীরা ১২-১৪ টাকা কেজি দরে আলু কিনে মজুত করেছেন। অথচ বিক্রি করছেন ইচ্ছেমতো। বাজারে সিন্ডিকেট ও মজুতদারি না কমলে কোনোকিছুর দামই কমবে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণে এনবিআর চিনি ও পেঁয়াজের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১১.১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪.২৬ টাকা কমবে। কমানো হয়েছে পেঁয়াজের শুল্ককরও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও পেঁয়াজের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসে ৩ লাখ ৩২ হাজার টন পাম তেল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। এ সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম। কমেছে পেঁয়াজের আমদানিও। গত তিন মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ টন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কী কারণে পণ্যগুলোর আমদানি কম হয়েছে, সরকারের উচিত তা খতিয়ে দেখা। না হলে পণ্যগুলোর দামের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। আমরা দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পাইকারি খুচরা বাজারে অভিজান চালাচ্ছি। পাইকারি-খুচরা পর্যায়ে দামের পার্থক্য যাচাই করে ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করা থেকে শুরু করে জরিমানা আদায় করছি। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা বাজারে সিন্ডিকেট আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিন্ডিকেট পাইনি। গত ৫ আগস্টের পরে সিন্ডিকেট চলে গেছে বলা যায়। টাস্কফোর্স কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠন করা হয়নি।

বাজার তদারকি করতে গিয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির কারণে ডিমের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সবজিসহ কিছু পণ্যের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। যার ফলে সাপ্লাই চেইনে কিছুটা ঘাটতির কারণে এসব পণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক লাভ করে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মূল্যের ব্যবধান যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তা টাস্কফোর্স কর্তৃক মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ অতি মুনাফা বা সুযোগ বুঝে মূল্যবৃদ্ধি করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

টাস্কফোর্স কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত বিভিন্ন বাজার/বৃহৎ আড়ত/গোডাউন/কোল্ডস্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থানসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করা এবং পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয় তদারক করা। উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মাধ্যমে দামের পার্থক্য ন্যূনতম রাখতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে টাস্কফোর্স।

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: