এসপিসি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা : উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন মাশরাফি
দেশের ডিজিটাল উন্নয়নকে একরকম হাতিয়ার বানিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পাতা হয়েছে। অ্যাপ ডাউনলোড করে বিজ্ঞাপন দেখলেই টাকা আয় করা যাবে- এমন লোভনীয় অফারের আড়ালে রয়েছে এমএলএম ব্যবসা। বিজ্ঞাপন দেখা না বরং একজন বিনিয়োগকারীর মূল আয় হবে আরেকজন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটিতে আনতে পারে। এর আগে দেশে যেসব এমএলএম প্রতারণার ঘটনা দেখা যায় তার থেকে এসপিসি’র পার্থক্য এটাই যে, আগেরগুলোতে প্রতি বিনিয়োগকারীকে কমপক্ষে দুই জন বিনিয়োগকারী যুক্ত করে ‘হাত’ পূরণ করতে হতো আর এখানে প্রয়োজন তিন জন। এসপিসি এই হাতের নাম দিয়েছে ‘জেনারেশন’।
এপ্রিল মাসে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অতিথি করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এসপিসি গ্রুপ’ নামক ঐ প্রতিষ্ঠানের লোগো উন্মোচন করা হয়। এরপর থেকেই মাশরাফিকে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড এম্বাসেডর’ দাবি করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের ক্রিকেটপ্রেমি মানুষের আবেগের মানুষটি যখন স্বয়ং এমন প্রতিষ্ঠানে তখন অনেকেই সন্দেহ বাদ দিয়ে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন এসপিসি’তে। সঙ্গে লোভনীয় অফার ও আয়ের সুযোগ তো থাকছেই। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির এমএলএম জাতীয় বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।
চার সেকেন্ডের পাঁচটি বিজ্ঞাপন দেখলেই অর্থাৎ মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করলেই আয় হবে ১০ টাকা। এর জন্য দরকার হবে প্লে-স্টোর থেকে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করা আর কোম্পানিকে আইডি খুলতে দিতে হবে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকা। সেই টাকাও আবার উঠে আসবে ৬০ দিনে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে কানাঘুষা হয় এসপিসি’র সঙ্গে মাশরাফির সম্পৃক্ততা নিয়েও। এনিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হলে অবশেষে এর জবাব দেন স্বয়ং মাশরাফি।
এমনই লোভনীয় আর চটকদার মোড়কের আড়ালে এমএলএম এর ফাঁদ পাতা প্রতিষ্ঠান ‘এসপিসি গ্রুপ’ এর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন নড়াইলের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
মঙ্গলবার (১ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ ভেরিফায়েড পেইজ থেকে এসপিসি’র সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। সেই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাশরাফিকে সম্পৃক্ত করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। মাশরাফি লেখেন-
“গত এপ্রিলে আমি ‘SPC GROUP’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে আমার চুক্তি ছিল, 'শুভেচ্ছা দূত' হিসেবে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারে আমার ছবি ও ধারণকৃত ভিডিও ব্যবহার করতে পারবে। বিনিময়ে তারা নড়াইলে ১০০টি উন্নতমানের সিসিটিভি স্থাপনসহ সামাজিক উন্নয়নের কাজ করবে। কিন্তু সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি, তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে ধারণা আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ব্যবসার ধরন তা নয়। দুই বছরের চুক্তি থাকলেও দুই মাসের মধ্যেই তাদের সম্পর্কে জানার পরই আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যেই আমি তাদেরকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি, আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি শেষ করার আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি।
আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমার নাম বা ছবি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে না জড়াতে”।