মার্কিন বাণিজ্য, অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতিতে যেসব পরিবর্তন আনতে পারেন ট্রাম্প
নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম অভিবাসী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম অভিবাসী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হলে আমদানির ওপর ব্যাপক মাত্রায় নতুন শুল্ক আরোপ, জলবায়ু সম্পর্কিত বিধিনিষেধ স্থগিত, ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর পুনর্গঠন ও মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শগত পরিবর্তন ঘটাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ এসব ঘোষণা বাস্তবায়নের পথ খুলে দিয়েছে তার সামনে। তবে এর মধ্যে কোনো কোনোটিকে এক প্রকার অসম্ভব দাবি করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এর অনেকগুলোই বাস্তবায়ন করতে কংগ্রেসের সমর্থনের প্রয়োজন হবে তার।
যদিও ট্রাম্পঘনিষ্ঠদের দাবি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবারের মেয়াদে প্রথমবারের চেয়ে আরো দ্রুতগতিতে নিজের লক্ষ্যগুলো অর্জন করে নিতে সক্ষম হবেন। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন এনেছিলেন ট্রাম্প। তবে নিজের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হিসেবে প্রায়ই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে অভিযোগ করতেন তিনি। আগেরবারের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবার মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা ও নীতি প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলো আরো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবেন এবার আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে এবারো বাধা হয়ে উঠতে পারে মার্কিন কংগ্রেস। করছাড় ও স্বাস্থ্যসেবা আইনে পরিবর্তন আনতে হলে তার কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। আবার অভিবাসন নীতি, শুল্ক আরোপ, বিদেশী যুদ্ধে হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠনে বেশকিছু পদক্ষেপ তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই নিতে পারবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করবেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে প্রশাসনে নিজের অনুগতদের নিয়োগ ও পুনর্বহাল নিশ্চিত করবেন। ট্রাম্প সমর্থক ইলোন মাস্কের দাবি, নতুন করে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে প্রশাসনের অংশ হিসেবে যদি তাকে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে অন্তত ২ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট কাটছাঁট করতে পারবেন।
বেশকিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে তার অভিবাসন নীতি। এ নীতির অংশ হিসেবে বিশাল ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণ, অভিবাসীদের ব্যাপক গণপ্রত্যাবাসন, সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি, সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ সীমান্ত নিরাপত্তায় বরাদ্দ রাখা এবং সন্দেহভাজন ড্রাগ কার্টেল ও অপরাধী গ্যাং সদস্যদের আদালতের শুনানি ছাড়াই বের করে দেয়ার জন্য ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প আরো বলেছেন, অভিবাসন আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ বা তার ভাষায় ‘ক্যাচ-অ্যান্ড-রিলিজ’ নীতির প্রয়োগ বন্ধ করবেন তিনি। একই সঙ্গে ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতিও পুনরায় চালু করবেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এ নীতি চালু ছিল। এর আওতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাওয়া অভিবাসীদের তাদের মামলা চলাকালে মেক্সিকোয় অপেক্ষা করতে হতো।
তবে অবৈধ অভিবাসীদের গণআটক বা এসব পরিকল্পনার অর্থায়ন নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা এখনো জানাননি তিনি। এছাড়া অতিরিক্ত সীমান্তরক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন বলে পলিটিকোয় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উঠে এসেছে। সামরিক বাজেটের কিছু অংশ সীমান্ত নিরাপত্তায় ব্যবহারের প্রস্তাব আদালতে খারিজ হয়ে যেতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণাকালে প্রতিশ্রুত নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন তিনি। এর আওতায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ এবং সব চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ট্রাম্প এবং তার প্রচারণা শিবির থেকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। বাণিজ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রেসিডেন্টের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে প্রণীত ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট (আইইইপিএ) ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রেও ট্রাম্প আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। আবার চীনের সঙ্গে স্থায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক বাতিল বা কার্বন-বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট ট্যাক্সে হস্তক্ষেপ করতে হলে তার কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুকে জানুয়ারির মধ্যে গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার পক্ষেও বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে বেশ আলাদা ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে ট্রাম্পের। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ফিলিস্তিন ইস্যুতে যেসব পরিকল্পনা সামনে এনেছিলেন, তাতে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।