শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে নিহত ৩৪ জনের ২৫ জনই মুন্সীগঞ্জের

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে আরো পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের করা হয়। নিহত ৩৪ জনের ২৫ জনই মুন্সীগঞ্জের বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা নদীর পাড়ে অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকে তারা ও স্থানীয়রা আরো পাঁচটি মৃতদেহ নদীতে ভেসে উঠতে দেখে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের খবর দেন। তারা এসে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করেন।
এর আগে লঞ্চডুবির দিন রোববার রাতে পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন সোমবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ 'প্রত্যয়'র সহায়তায় উল্টো করে লঞ্চটি নদীর পূর্বপারে আনা হয়। এরপরই লঞ্চটির ভেতর থেকে ২৪ জনের মৃতদেহ বের করে আনা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আরেফিন জানান, মৃতদেহগুলো অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। পরিচয় নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছি। পরে স্বজনদের তথ্য মতে তাদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তইন বিল্লাহ জানান, নিহত ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই নিহতদের মধ্যেই অধিকাংশই মুন্সীগঞ্জের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তার হলেন- মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকার দোলা বেগম (৩৪), সদরের রুনা আক্তার (২৪), মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০), তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মালপাড়ার সুনিতা সাহা (৪০), তার ছেলে বিকাশ সাহা (২২), উত্তর চরমসুরার পখিনা (৪৫), একই এলাকার বীথি (১৮), তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), সাদিয়া আক্তার (১১), মোল্লাকান্দি চরকিশোরগঞ্জের মো. শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ণ দাস (৬৫), তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ছাউদা আক্তার লতা (১৮), খাদিজা বেগম (৫০), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০), তাদের এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার দুই বছরের শিশু আজমির (ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা দাদা সাইফুল ইসলাম বেঁচে গেছেন), ঢাকার শনিরআখড়ার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, শরীয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছা. জিবু (১৩) ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সেলসারদীর মো. নয়ন (১৯)।
উল্লেখ গত (৪ এপ্রিল) রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে এসকে-৩ নামে একটি কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায় সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি।