শিরোনাম

South east bank ad

লাভ কমেছে, বিক্রি কমেনি সঞ্চয়পত্রের

 প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

লাভ কমেছে, বিক্রি কমেনি সঞ্চয়পত্রের
এক ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন মুনিরা ইসলাম, স্বামী মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন। সেখান থেকে যে টাকা পাঠান তা দিয়ে বাসা ভাড়া, ছেলের লেখাপড়া এবং অন্যান্য খরচ মিটিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় করেন। জমানো সেই টাকা দিয়ে দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন মুনিরা। নিজের নামে কেনা পরিবার সঞ্চয়পত্রের মাসিক মুনাফা তুলতে বৃহস্পতিবার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন তিনি। ব্যস্ততার কারণে গত কয়েক মাসের মুনাফা তোলেননি। পাঁচ মাসের মুনাফা একসঙ্গে তুলে তার সঙ্গে কিছু টাকা যোগ করে আরও এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলেন তিনি। সুদের হার কমানোর পরও বিনিয়োগ করছেন কেন-  জানতে চাইলে এই নারী  বলেন, “জানি, এখন মাসে একটু কম টাকা পাওয়া যায়। তাতে কী, মাস শেষে তো নিশ্চিত টাকাটা পাওয়া যাবে। কোনো ঝামেলা নাই। ব্যাংকে রাখলে তো আরও কম পেতাম।” পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে আগে মাসে ১ হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পাওয়া যেত, সুদের হার কমানোয় এখন পাওয়া যাচ্ছে ৯৬০ টাকা। মুনাফা কম পাওয়া গেলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, উল্টো বিক্রি বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত অগাস্ট মাসে ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। জুলাই মাসে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তার আগের দুই মাস জুন ও মে মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ১৭০ কোটি এবং ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত বছরের অগাস্টে ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) ৪ হাজার ৬২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩২৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, “সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোনো স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে।” সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ঋণের ভার কমাতে গত ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ করে কমায় সরকার। তবে ওই সময়ের আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তারা আগের সুদেই মুনাফা পাবেন বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর জানায়। বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ঋণের বোঝা কমাতে সরকার ‘বাধ্য হয়েই’ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত। ২৩ মের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ৪৫ ও ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যেত। সুদের হার কমানোর পর এখন কেউ পাঁচ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনলে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। আর পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে। ৩ বছর মেয়াদি ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে সুদ হার ঠিক করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদ হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ২৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। তার আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৭৩ কোটি টাকা। প্রতিদিন যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় তা থেকে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট বিক্রি বলে হিসাব করা হয়।
BBS cable ad

ক্রয়-বিক্রয় এর আরও খবর: