মশা ‘চাষের’ অভিযোগে ৩ সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ডিএনসিসি
মেয়রের হুশিয়ারির পর এবার সত্যি সত্যিই দু’টি সরকারি সংস্থা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে বিমানবন্দর রেলস্টেশন, বেসামরিক বিমান চলাচল (সিভিল এভিয়েশন) কর্তৃপক্ষ ও আশিয়ান সিটি। আজ সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেলে ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, ডিএনসিসির অঞ্চল-৭ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বিকেল জানান, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, সিভিল এভিয়েশন ও আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে আদালতে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার সকালে ডিএনসিসির উত্তরখান ও দক্ষিণখান (অঞ্চল-৭ ও ৮) অঞ্চলে মশক নিধন অভিযান পরিদর্শনে যান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরিদর্শনকালে বিমানবন্দরের পেছনে রেলওয়ের একটি খালে ময়লা-আবর্জনা, নোংরা ও বদ্ধ পানি এবং সেখানে অসংখ্য মশার লার্ভা দেখতে পেয়ে মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাশেই তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) একটি জায়গায় বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা, আবর্জনার স্তুপ, বদ্ধ পানি, মশার অসংখ্য লার্ভা দেখতে পান। তারপর তিনি হাজী ক্যাম্পের পাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটি বিশাল জলাশয়েও একই দৃশ্য দেখতে পান। হাজী ক্যাম্পের বিপরীত দিকে সীমানা প্রাচীর ঘেরা একটি স্থানে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও আবর্জনা। এগুলো দেখার পরে তিনি সিভিল এভিয়েশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপর আতিকুল ইসলাম হাজী ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে হেঁটে আশিয়ান সিটি পরিদর্শন করেন। সেখানেও বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা, বদ্ধ পানি, আবর্জনা ইত্যাদি দেখতে পান। এসব দেখার পরে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
মূলত এ নির্দেশনার পরেই আদালতে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় এসব সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মশা ‘চাষ’ করার অভিযোগ আনা হয়।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পেছনে পরিদর্শনকালে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এটা হলো আমাদের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশ, এটি রেলওয়ের জায়গা। পাশে সিভিল এভিয়েশনের জায়গা, সেটার অবস্থা আরও খারাপ। আমরা চেষ্টা করছি যেগুলো আমাদের জায়গা, সেগুলো পরিষ্কার করতে। কিন্তু যেটা রেলের জায়গা, যেটা সিভিল এভিয়েশনের জায়গা, সেগুলো তাদের পরিষ্কার করা উচিত। আমরা সিভিল এভিয়েশনকে এর আগেই এ বিষয়ে বলেছি। এখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। এটা রেলওয়ের জায়গা, রেলওয়ের উচিত এটা পরিষ্কার করা। সিভিল এভিয়েশনের জায়গা সিভিল এভিয়েশন দায়িত্ব নেবে। সিটি করপোরেশনের জায়গা সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নেবে। কিন্তু যে যার যার মতো চলছে, আর গালি খাচ্ছি আমরা। এটি হতে পারে না। সিভিল এভিয়েশনের এরিয়া বাউন্ডারি দেওয়া, এর ভেতরে যাওয়া যাবে না। সিভিল এভিয়েশনকে বারবার বলা হচ্ছে, এগুলো পরিষ্কার করার জন্য। এখানে কোটি কোটি মশার লার্ভা।
মেয়র আরও বলেন, কারো বাসার ভেতরে আমাদের পরিষ্কার করার কথা না। সিভিল এভিয়েশনের ভেতরে আপনারা দেখলেন কোটি-কোটি মশার লার্ভা। এটার ভেতর আমাদের যাওয়ার কথা না। এটা উচিত উনাদের পরিষ্কার করা। রেলওয়ের পাশে দেখলেন অনেক ময়লা ও মশার লার্ভা। এটা আসলে রেলওয়ের পরিষ্কার করার কথা। আমরা এখন মামলায় যাচ্ছি, সোজা আঙুলে আর হচ্ছে না।
আশিয়ান সিটি পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, এখানে এত বদ্ধ, নোংরা জলাশয় এবং কচুরিপানা আছে। এখানে এত মশার উৎপাদন হচ্ছে এ এলাকার মানুষকে অতিষ্ট করে তোলার জন্য যথেষ্ট।
পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়েদুর রহমান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী আকবর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।