ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টায় এক্সিম ব্যাংক

তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক এশিয়া পিএলসির কাছ থেকে প্রায় ৩৮৯ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল তালিকাভুক্ত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসি। নির্ধারিত সময়ে ধারের টাকা পরিশোধ না করায় দুই ব্যাংকের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ব্যাংক এশিয়া অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকটির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে এক্সিম ব্যাংক। ৯ আগস্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাঠানো চিঠির জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে ব্যাংকটি।
তথ্যানুসারে, সম্প্রতি ‘এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ক্রোকের নির্দেশ’ শিরোনামে একটি সংবাদ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে পাঠানো চিঠির জবাবে ব্যাংকটি জানিয়েছে, আন্তঃব্যাংক প্লেসমেন্টের আওতায় ব্যাংক এশিয়া ঋণ দিয়েছিল। তবে অর্থ আদায়ে তারা আদালতের আশ্রয় নেয়, যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের বাইরে। বিষয়টি নিয়ে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো আর্থিক প্রভাব ফেলবে না।
উল্লেখ্য, এক বছর আগে ব্যাংক এশিয়ার কাছ থেকে ৩৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৪ টাকার ঋণ নেয় এক্সিম ব্যাংক। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক্সিম ব্যাংক সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। ওই ঋণ আদায়ের জন্য ঢাকার ৫ নম্বর অর্থঋণ আদালতে মামলাটি করে ব্যাংক এশিয়া। ৪ আগস্ট বিচারপতি মুজাহিদুর রহমান এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় অস্থায়ীভাবে ১৫ দিনের জন্য জব্দের আদেশ দেন। ২১ আগস্ট আদালতে এক্সিম ব্যাংকের জবাব দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যাংক এশিয়া ওই অর্থ এক্সিম ব্যাংককে ধার দিয়েছিল। ছয় মাসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আমরা তাদের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা সেটি না করে মামলা করে দিয়েছে। এ ধরনের মামলার কোনো অর্থ হয় না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই আমাদের ওই অর্থ এখনই ফেরত না দেয়ার জন্য বলেছে। ব্যাংক এশিয়ার মামলার বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৫ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২১ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৪ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৫ শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ২ পয়সায়।
সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৩৩ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে ব্যাংকটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৮২ পয়সায়।
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ব্যাংকটি। আলোচ্য হিসাব বছরে এক্সিম ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৩৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে ব্যাংকটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকায়।
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৩৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে ব্যাংকটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকায়।
২০০৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৪। এর ৩২ দশমিক ৪৪ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৩৭, বিদেশী বিনিয়োগকারী দশমিক ৬৫ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।