South east bank ad

গত অর্থবছরে সবজি রফতানি কমেছে ৩৮.৬৪%

 প্রকাশ: ২২ অগাস্ট ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

গত অর্থবছরে সবজি রফতানি কমেছে ৩৮.৬৪%

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে রফতানির উদ্দেশ্যে যেসব কৃষক সবজি চাষ করে আসছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। একই সঙ্গে কমেছে এখান থেকে আসা রফতানি আয়ও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, দেশের সবজি রফতানি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবজি রফতানি হয়েছিল প্রায় ১১ কোটি ২৪ লাখ ডলারের, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি ১১ লাখ ডলারে।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, বিমানের কার্গো ও কনটেইনারের খরচ বৃদ্ধি এবং মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতির কারণে সবজি রফতানি এখন নিম্নমুখী।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে বাংলাদেশ থেকে তাজা সবজি রফতানি হচ্ছে। এর পরও বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সবজির বাজারের ব্যাপ্তি খুবই সীমিত। এর অন্যতম কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই সবজি রফতানির সিংহভাগ যাচ্ছে ঘুরেফিরে মাত্র ছয়টি দেশে। বাকি দেশগুলো থেকে যে রফতানি আয় হচ্ছে তা তুলনামূলক খুবই নগণ্য।

বাংলাদেশ থেকে ওমানে সবজি রফতানি করেন নোয়াখালীর শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার সবজির চাহিদাও মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বেশি। তারপরও আমরা সেভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। এর মূলে রয়েছে দেশে ক্রমাগত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। অন্যান্য যেসব দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সবজি আসে, সেখানে উৎপাদন খরচ আমাদের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে সার, বীজ, পরিবহন, সেচ সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যে কারণে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

শাহ আলম জানান, মধ্যপ্রাচ্যে সবজির ব্যবসা করেন এমন অনেক বাংলাদেশীও এখন ভারত, পাকিস্তান বা অন্যান্য দেশ থেকে সবজি আমদানি করেন। কারণ, এতে খরচ কম। তাই সবজি রফতানিতে ভালো করতে হলে বাংলাদেশকে উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি রফতানি হওয়া ছয়টি দেশ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও কুয়েত। এর বাইরে ইতালি, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, সুইডেন, কানাডা, জার্মানির মতো অন্যান্য ৩৫টির বেশি দেশে যায় মোট সবজি রফতানির মাত্র ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে সবজিজাতীয় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় আলু। কিন্তু চীন, ভারত, রাশিয়ার মতো আলু উৎপাদনকারী দেশ কম মূল্যে আলু রফতানি করায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অথচ ২০১৫-১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আলু রফতানিতে শীর্ষ তালিকায় ছিল। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শিম, বেগুন, কাঁকরোল, পটোল, মুখীকচু, লাউ, চাইনিজ ক্যাবেজসহ বিভিন্ন সবজি ও শাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে।

রফতানিকারকরা বলছেন, দেশীয় বাজার থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি দরে সবজি কিনতে হয় তাদের। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হিমায়িত সবজির চাহিদা থাকলেও বিমানের কার্গো খরচ ও রেফার কনটেইনারের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবজি ও ফল রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো যেখানে অর্গানিক শাক-সবজি ও ফল রফতানি করছে, সেখানে আমাদের উৎপাদিত পণ্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অথচ বিদেশীরা রাসায়নিকযুক্ত এসব সবজি ও ফল আমদানিতে আগ্রহী নন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ফল ও সবজি রফতানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু গত অর্থবছরে ২০ বারের বেশি কার্গোবাহী বিমানের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এক কেজি আলুর জন্য ভাড়া গুনতে হয় প্রায় ৭০০ টাকা, যেখানে ভারতের ব্যবসায়ীরা বিমান ভাড়া দেন মাত্র ২৫০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী রফতানিকারকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অন্তত ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী সবজি রফতানি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তারা বলছেন, বিমানে করে সবজি না পাঠিয়ে সমুদ্রপথে রেফার কনটেইনারের মাধ্যমে পচনশীল ফল, শাক-সবজি পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে কনটেইনারের ভাড়া ১ থেকে দেড় হাজার ডলার ছিল, সেটা বেড়ে ৫-৬ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিলে সবজি ও ফল রফতানিতে লোকসান আরো বাড়ছে।

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: