“ছোটবেলার একাল সেকাল” শামীম আহমেদ
“ছোটবেলার একাল সেকাল”
শামীম আহমেদ
মনে পরে বাবা ২টাকা দিয়ে বলেছিলেন যাও স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়ে আসো, প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হতে এর চেয়ে বেশী টাকার দরকার ছিল না। তবে স্কুলের বইয়ের দাম একটু বেশী ছিল। মায়ের সাথে প্রতিবেশীদের খাতির ছিল খুবই সুন্দর, আর মা যেহেতু পান খেতেন তাই পাড়ার খালাম্মারা প্রায় আসতেন পান খাওয়ার জন্যে, মা নিজেও যেতেন একটু চুন,জরদা বা পান ধার করে আনার জন্যে। তখন কার সময়ে পান, আলু বা পেয়াজ এমনকি তরকারি ধার করারও প্রচলন ছিল। মায়ের এমন খাতিরের কারণে সৌভাগ্যবশত আমি কম দামে পুরাতন বই পেয়ে যেতাম। আমাদের সময়ে অনেক মায়েরাই পুরাতন বইয়ের জন্যে উপরের শ্রেনীতে পড়া ছাত্র/ছাত্রীদের মায়ের কাছে নভেম্বর মাসের মধ্যেই বুকিং দিয়ে রাখতেন। তখনকার সময়ে আমরা খুব সাবধানে বই পড়তাম যাতে মা বাবা পুনরায় বইগুলো কাউকে দিতে পারে । তখনকার সময়ে “সোভিয়েত ইউনিয়ন” খুব সুন্দর একটা বাংলা পত্রিকা বের করতো ঐ পত্রিকায় তাদের দেশীয় নিউজ বাদেও “ঈশপের গল্প” সহ অনেক ধরনের গল্প পড়া যেত। আমরা ঐ পত্রিকা দিয়ে বইয়ের কভার লাগাতাম। বইয়ে সহজে কোন দাগ লাগতে দিতাম না। যদি কোনো মেয়েকে মা বই গুলো দিতো তাহলে ময়ুরের পাখা বা তিব্বত পাউডার মেখে দিতাম যাতে মেয়েটা আমাকে স্মার্টভাবে।
চিত্তবিনোদনের জন্যে ছিল চাড়া (মাটির হাঁড়ির ভাংগা অংশ) দিয়ে খেলা বাজি হিসেবে ধরতাম লিচুর বিচি অথবা সিগারেটের প্যাকেট যার কাছে এ গুলো বেশী থাকতো সে তত বেশী বড়লোক। সারাদিন লিচুর বিচি আর সিগারেটের প্যাকেট খুঁজতাম। আমার কাছে বড় সাইজের দুটি ডানোর ডিব্বা ভর্তি লিচুর বিচি সব সময় থাকতো। একটা বড় দুর্ঘটনায় একবার আমি গরীব হয়ে গিয়েছিলাম। ডানোর ডিব্বাটা ঝং ধরার কারণে ফুটো ছিল, বৃষ্টির পানি ঢুকে আমার আমার সমস্ত লিচুর বিচিগুলো ফাংগাস পরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এখনো লিচুর বিচিগুলোর জন্যে কষ্ট লাগে। আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে দুইশো লিচুর বিচি ধার নিয়ে ছিলাম আজো দিতে পারিনি, আর কোন দিন দিতেও পারবো না কারণ বন্ধুটি গত হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর হলো।
বিনা পয়সায় বই, মোবাইলের যুগ আর অটো পাশের বছরে কেন জানি না পুরাতন লেখা পড়া খেলা ধুলার কথা খুব মনে পরছে। মনে পরে আমাদের সময়ে এস এস সি পরীক্ষা হতো একই দিনে দুটি। সকালে প্রথম পত্র তো বিকেলে দ্বিতীয় পত্র। মাঝখানে এক ঘন্টার বিরতী। বিরতীর সময়ে বাবা বা নিকট আত্মীয়রা নানা ধরনের খাবার নিয়ে আসতো। খাবো না পড়া রিভিশন দিবো। “ খা বাবা এই আপেলটা খা “ পাস থেকে হয়তো এক খালাম্মা সাবধান করলো “ ভাই পরীক্ষার সময়ে গোল জিনিস খাওয়াইেন না” বাবা ভয়ে হাত থেকে আপেল নিয়ে কলা ধরিয়ে দিলেন। তবে মজার ব্যপার হলো আপেল খাওয়া অনেক ছেলেই আমার চেয়ে অনে নম্বর বেশী পেয়ে ভালো মতোই পাশ করেছে। আমার মেয়ের পরীক্ষার সময়ে গিয়ে দেখি এক বাবা তার মেয়েকে গোল বার্গার খাওয়াচ্ছে। মনে মনে সেই খালাম্মার কথা খুব মনে পরেছিলো। আহা কি সুন্দর, কি ভালো লাগারই না দিনগুলো ছিল।
আজ কাল সেই শৈশবগুলো আর নাই, আছে মোবাইল নামক আজব যন্ত্র আছে ফেস বুক, পড়া লেখার এ যুগে আছে অটো পাশ। চলে এসেছে অন লাইন ক্লাস। চলছে ভারচুয়াল ভালোবাসা, রেকর্ড করার কারণে সাইবারক্রাইম। আমাদের সময়ে এক থাপ্পরেই প্রেম চলে যেতো নদীর ঐ পারে। হয়তো ব্যর্থতা লুকাতে ছিল পাতার বিড়ি।
(শামীম আহমেদ, ব্যাংকার)