আমজাদ খান চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ : যে আলো প্রস্ফুটিত হয় প্রাণে প্রাণে
আলোর মানুষ। যে আলো প্রস্ফুটিত হয় লক্ষ প্রাণে। আঁধার যেখানে ঘনীভূত, সেখানে আলো বিলিয়েছেন নিমিষেই। একজন সেনাকর্তা থেকে উদ্যোক্তা। হলেন কৃষক-মেহনতি মানুষের ভাগ্যত্রাতাও। বলছিলাম প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর কথা। যিনি ছিলেন একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টা।
স্বপ্নকে সারথি করেই ছিল তাঁর পথচলা। স্বপ্নডানায় ভর করে দিগন্তজুড়ে ছিল যার স্বপ্নবোনা। যেখানে-ই তিনি হাত দিয়েছেন, শত বাধা প্রতিকূলতা দূরে ঠেলে সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছেন। শুধু সফলতাই নয়, সেখানকার মানুষকেও স্বাবলম্বী করার প্রয়াস চালিয়েছেন এই উদ্যোক্তা। মেধা আর বিচক্ষণতায় তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৩৯ সালের ১০ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী কাশেম খান চৌধুরী ও মাতার নাম আমাতুর রহমান। তিনি ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি ও অস্ট্রেলিয়ান স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মেজর জেনারেল হিসেবে আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। ১৯৮১ সালে তিনি রংপুরে টিউবওয়েল তৈরির কারখানা হিসেবে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি, যার ব্র্যান্ড নাম প্রাণ।
আমজাদ খান চৌধুরী মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসসি), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি, পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও আন্ডারপ্রিভিলেজড চিলড্রেনস এডুকেশন প্রোগ্রাম (ইউসেপ) সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পথিকৃৎ ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে প্রাণ-আরএফএল-এর যাত্রা। পৃথিবীজুড়ে প্রাণ-আরএফএল পণ্যের হাতছানি, যেখানে লাখ প্রাণ মিলছে প্রতিনিয়ত। প্রায় দেড়শ রাষ্ট্রে গ্রুপটির পণ্য বেচা-কেনা হচ্ছে। লাখেরও ওপর সদস্য কর্মরত প্রাণ-আরএফএল পরিবারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটি বিস্ময়ও বটে।
দেশের ক্রান্তিকালেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে গ্রুপটি আলোচনার কেন্দ্রে। বিশেষ করে তরুণদের বিশ্বস্ত কর্মস্থল নামে বিবেচিত বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ মেহনতি কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি রফতানি আয়েও অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে বছর পরম্পরায়।
ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি নানা সেবামূলক কাজেও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী। শেষবেলা পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে মিশে জীবনের গল্প বুনেছেন। তেমনই এক গল্পের নাম ‘আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল’। জন্মস্থান নাটোরের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য একটি আধুনিক মানের হাসপাতালের পত্তন দিয়েছিলেন নিজের হাতেই। এখন তা পূর্ণতা পেয়ে জনসেবায় নিয়োজিত।
আমজাদ খান চৌধুরীর হাতে প্রতিষ্ঠিত প্রাণকে এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর ছেলে আহসান খান চৌধুরী। তিনিই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর চেষ্টায় ভারত, আরব আমিরাত, আফ্রিকা, মালয়েশিয়া ও স্পেনে খুলেছে প্রাণের দফতর। আহসান খান চৌধুরীর লক্ষ্য, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পিতার প্রতিষ্ঠিত প্রাণকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।