জুলাইয়ে দেশের পুঁজিবাজারে ১২ শতাংশের বেশি রিটার্ন

দীর্ঘদিনের মন্দাবস্থা কাটিয়ে দুই মাসেরও কিছুটা বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুলাইয়ে ডিএসইএক্স সূচক ৬০৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৪৩ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে, যা ছিল সাড়ে নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের মাস শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৮৩৮ পয়েন্টে। সূচকের পাশাপাশি এ সময়ে ডিএসইতে গড় লেনদেন বেড়েছে ১১৯ শতাংশ। জুলাইয়ে এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড়ে ৭৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৩৪০ কোটি টাকায়।
জুলাইয়ে দেশের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা জুলাই শেষে ৭ লাখ ১২ হাজার ২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোর মধ্যে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ রিটার্নের ভিত্তিতে জুলাইয়ে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ভিয়েতনামের ভিএন ৩০ সূচক। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে থাইল্যান্ডের এসইটি সূচক। এ সময় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ রিটার্ন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এছাড়া আলোচ্য মাসে শ্রীলংকার সিএসই সব শেয়ারের সূচকে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার আইডিএক্স কম্পোজিট সূচকে ৮ দশমিক ৮৯ ও পাকিস্তানের করাচি-১০০ সূচকে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ রিটার্ন এসেছে।
বিশ্বের অন্যান্য প্রধান পুঁজিবাজারের মধ্যে জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে এ সময়ে ফিলিপাইন ও ভারতের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক পরিস্থিতির প্রভাব গত মাসে পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি এ সময়ে রফতানি ও রেমিট্যান্স পরিস্থিতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এর বিপরীতে সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার এ সময়ে কিছুটা কমেছে। তাছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রান্তিক প্রতিবেদনে আর্থিক ফলাফল ভালো আসতে পারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন প্রত্যাশাও ছিল। ফলে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় মূলধনি কোম্পানি বিশেষ করে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি ঝুঁকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দরকষাকষিতে ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে এমন প্রত্যাশার কারণে বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। সব মিলিয়ে এসব কারণে গত মাসে দেশের পুঁজিবাজারে সার্বিকভাবে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে।
গত সপ্তাহের বাজার পরিস্থিতি: জুলাইয়ে পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখিতার পর গত সপ্তাহে কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতার কারণে গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচক ৩৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫ হাজার ৪৩৩ পয়েন্ট। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১১৪ পয়েন্ট। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সামান্য কমে ১ হাজার ১৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ১৭১ পয়েন্ট। ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, কমেছে ২২৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বাজারদর।
আর লেনদেন হয়নি ১৮টির। গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩২ টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন কমেছে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৫ হাজার ২০২ পয়েন্ট। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৯ হাজার ৩২৬ পয়েন্ট। সিএসইতে গত সপ্তাহে ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৮১ কোটি ৮১ লাখ লাখ টাকা। আলোচ্য সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, কমেছে ১৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির বাজারদর।