সফল অনলাইন নারী উদ্যোক্তা কুষ্টিয়ার লিজা
মহামারী করোনায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে অনলাইন ব্যবসা। যেহেতু ঘরে বসেই যে কেউ পরিচালনা করতে পারেন এই অনলাইন ব্যবসা। তাই এটা করোনাকালীন সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে।
মহামারি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) হঠাৎই থমকে গেছে সারাবিশ্ব। থমকে গেছে মানুষের জীবন। কেউ হয়েছেন ঘরবন্দী, কেউবা কর্মহীন। তবে জীবন ধারণে জীবিকার্জনের বিকল্প নেই মানুষের। তরুণ ও তরুণীরা ঝুঁকছেন অনলাইন ব্যবসায়। ঝুঁকি থাকলেও অনলাইন ব্যবসায় সফল হয়েছেন অনেকই। তেমনই এক সফল নারী অনলাইন উদ্যোক্তা আরিফিন পারভিন লিজা, করোনাকালীন নারী হয়েও চুপটি মেরে ঘরে বসে নেই তিনি, স্বাবলম্বী হতে বেছে নিয়েছেন অনলাইন ব্যবসা। আরিফিন পারভিন লিজা তাঁর "আরিফিন’স ড্রিম" ফেসবুক পেজে ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য দিতে থাকেন। পণ্যর মধ্যে রয়েছে- কুমারখালীর বিখ্যাত শাড়ি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেড সিট, থ্রিপিস, পিলো কভার, শোপিস ইত্যাদি।
তিনি কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌরসভার কুন্ডুপাড়ার বাসিন্দা। ১৯৮৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারী কুমারখালী পৌরশহরে কুণ্ডু পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন আরিফিন পারভীন লিজা। বাবা তোফাজ্জেল হোসেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মা আফরোজা খাতুন গৃহিণী। স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ কুমারখালী পৌরসভায় চাকুরি করেন। বাড়ি কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। আরিফিন পারভিন লিজা ২০০১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর বিবাহ করেন। কিন্তু থেমে ছিলনা তার শিক্ষাজীবন। পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। এরপর ২০১৬ সালে কুমারখালী সরকারি কলেজে অনার্সে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পরিবারে স্বামী, এক সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন।এমন পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কিছু একটা করতে হবে- এমন ধারণা থেকেই ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ, বাবা তোফাজ্জল হোসেন, ছোট ভাই মুরছালিন আহমেদ ও তার বোন লায়লা তানজিনের সহযোগীতায় ফেসবুকে "আরিফিন’স ড্রিম" নামে পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
এ কাজে সবসময় তার স্বামী ও বাবা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেইসঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সাপোর্টের কথাও জানান তিনি।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, খাঁটি ঘি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, কাঠের তৈরি শোপিস, দেশীয় পোশাক, ফরমালিনমুক্ত আম ইত্যাদি বিক্রি করেন তিনি। এগুলোর দাম ও মানের কারণে তিনি সাধারণের কাছে অল্প সময়ে ভালো অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
এমন উদ্যোগ সম্পর্কে আরিফিন পারভিন লিজা বলেন, শুরুটা তেমন একটা সহজ ছিলো না। পরিবার এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় এগিয়ে চলতে সাহস পেয়েছি। পড়াশুনা শেষ করে চাকরি ও সংসার করার পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করার দৃঢ় ইচ্ছে ছিল। করোনায় ঘরে বসে বেকার কাটছিল সময়। অনলাইন দেখে দেখেই করোনাকালীন মাথায় আসে অনলাইন ব্যবসার প্ল্যান।
বর্তমান ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভালো কেনাবেচা চলছে। ধীরে ধীরে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার অনলাইন পেজ "আরিফিন’স ড্রিম"। ভবিষ্যতে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান।
লিজা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি, সঙ্গে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বলতে গেলে অনেকটাই শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। তাই অন্য নারীদেরও উচিত হবে শুধু শুধু ঘরে বসে না থেকে, সংসারের পাশাপাশি কিছু একটা করা। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, 'Womer & e-commerce forum বাংলাদেশের সব থেকে বড় অনলাইন বিজনেস গ্রুপ। আমি এই গ্রুপের কুষ্টিয়া জেলা সহকারী প্রতিনিধি। গ্রুপের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযোগীতা নিয়ে আজ আমি সফল উদ্যোক্তা। আমার কাজ কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে যে সকল উদ্যোক্তা আছেন, তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা। মূলত কুষ্টিয়া জেলার উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি আমি।'
তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সেল আপডেট ১৫ লাখ এক হাজার ৯৪৫ টাকা। যা কুষ্টিয়া জেলায় অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রথম। ৬২টি জেলা এবং পাঁচটি বিভিন্ন দেশে আমার পণ্য পৌঁছেছে। মাত্র ২৯১ দিনে আমি এই অর্জন পেয়েছি।
এ বিষয়ে তার স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ বলেন, করোনায় ঘরে বসে বসে অবসর কাটছিল। হঠাৎ ওর মাথায় অনলাইন ব্যবসার চিন্তা ভাবনার আসে। আমি সমর্থন করি। এখন বেশ ভালই লাগে। আমি ওকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তিনি আরও বলেন, সকল নারীদেরই কিছু একটা করা উচিৎ।