শুরুতেই নামছে সবুজ রঙের ২০৭টি বাস
অবশেষে ঢাকায় চালু হচ্ছে কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা। সব মিলিয়ে ৪২টি রুটে বাস পরিচালনা করবে ২২ কোম্পানি। প্রথম রুটটি হচ্ছে ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর। রুটটির জন্য প্রাথমিকভাবে ২০৭টি বাসের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো এখন তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এ কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠন করা জয়েন্ট ভেঞ্চার থাকবে পরিচালনার দায়িত্বে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোম্পানির ঢাকায় ছয় রঙের বাস চলবে। ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের। আগামী পহেলা বৈশাখ বা এপ্রিলের যেকোনো দিন রুটটি চালুর পরিকল্পনা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুরের মধ্যে বর্তমানে বাসের রুটের সংখ্যা তিনটি। রুটগুলো হলো এ-৪০৬, এ-৪৩৯ ও এ-১৬১/সি। রুটগুলোতে চলাচল করা তিনটি কোম্পানির ২০৭টি বাস নতুন রুটটিতে চালানোর জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। এর মধ্যে রজনীগন্ধা পরিবহনের ১২২টি বাস, মিডলাইন পরিবহনের ৫২টি বাস ও মালঞ্চ ট্রান্সপোর্টের ৩৩টি বাস রয়েছে।
পরিবহন মালিক সমিতি যে ২০৭টি বাসের তালিকা প্রস্তুত করেছে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বেশ পুরনো। রঙচটা আর দুর্বল ফিটনেসের বাসগুলো পরিচালনার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মালিক সমিতির নেতারা। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, বাসগুলো যেন প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারে, সেজন্য মালিকদের স্বল্প সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিগগির এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জাানিয়েছেন তিনি।
নতুন রুটটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হবে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। রুটটি থেকে আয়ের অর্থ কোম্পানির অংশীদারদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হবে। চালক-শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়া হবে। কোনো ধরনের চুক্তিতে নয়, মজুরি নির্ধারণ হবে দৈনিক বা মাসিক হিসেবে। এ কোম্পানির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। অন্যদিকে রুটটির ভাড়ার হার ঠিক করার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
শুরুতে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের প্রথম রুটটি করার কথা ছিল ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। তবে এতে আপত্তি জানান বাস মালিকরা। তাদের যুক্তি এত ছোট রুটে বাস চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা হবে না। পরে বিষয়টি পর্যালোচনা করে রুটটি মতিঝিল থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশন’ কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার, পদাধিকারবলে যার সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ্ উদ্দিন। নতুন রুটটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা প্রবর্তনের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী এপ্রিল নাগাদ ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুরে প্রথম রুটটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এ রুটটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি আন্তঃজেলা টার্মিনালের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা সিংহভাগ যাত্রী রুটটি ব্যবহার করে পছন্দের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। প্রথম রুটটির সফলতা কিংবা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন উদ্যোগের বাকি রুটগুলো চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার নগর ভবনে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির ১৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নতুন রুট চালুর বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি জানান, রুটটির ঘাটারচর-মতিঝিল অংশের জন্য ৩৬টি স্থানে বাস-বে ও বাস টার্মিনালের জন্য চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে মতিঝিল-কাঁচপুর অংশে বাস-বে, টার্মিনালের স্থান নির্বাচনের কাজ শুরু হচ্ছে।
সভা শেষে তাপস বলেন, যেসব বাস চলাচল করবে, সেগুলো আধুনিকায়নের জন্য মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি। ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে মালিকদের প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার জন্য আমরা শিগগির আনুষ্ঠানিক চিঠি দেব।