South east bank ad

চা শ্রমিকদের দুর্দশা বঞ্চনা আর কৃতদাসের জীবন সেই শুরু থেকেই

 প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

চা শ্রমিকদের দুর্দশা বঞ্চনা আর কৃতদাসের জীবন সেই শুরু থেকেই

তানভীর আঞ্জুম আরিফ (মৌলভীবাজার) :
দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও চা শ্রমিকদের দুর্দশা বঞ্চনা আর কৃতদাসের জীবন সেই শুরু থেকেই। পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হলেও চা বাগান যেন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে পৌঁছে না আধুনিকতার আলো, মিলে না জীবন ধারণের ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সূত্রমতে,দেশে মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১৬৭টি। তাতে বসবাস করেন প্রায় ১০ লাখ জনগোষ্ঠী। এসব বাগানে নিবন্ধিত শ্রমিক প্রায় ১ লাখ, অনিয়মিত শ্রমিক আরো ৪০ হাজার। দেশের মোট চা বাগানের মধ্যে ৯২ টি চা বাগানের অবস্থান মৌলভীবাজারে।
চা শ্রমিকদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী। মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে তারা প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করেন। ১২০ টাকার বেতন আর সপ্তাহে ৩ কেজি চাল বা আটা রেসন হিসেবে পান তারা। যা ৫/৬ জনের পরিবারে মৌলিক চাহিদা পূরণের অপূর্ণতার পাশাপাশি বেঁচে থাকার মত সুযোগও পাচ্ছেন না। ফলে শিশু মৃত্যু, মাতৃমৃত্যুসহ অপুষ্টির কারণে এখানে গড় আয়ুও কম। আর্থিক টানা পোড়ন নিয়ে জীবন কাটালেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চা উৎপাদন ধরে রেখেছেন চা কন্যারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভোজন কৈরী বলেন, প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি চা পাতা তুলতে হয় নারী শ্রমিকদের। বাড়তি চা-পাতা তুললে যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা, তাও পান না বেশির ভাগ নারী। কাজের স্থানে নারী শ্রমিকদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি,বিশ্রামাগার কিংবা টয়লেট ব্যবস্থা। প্রতিটি বাগানে ডিসপেনসারি থাকার কথা এবং তাতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ৯০ শতাংশ বাগানে সেই সুবিধা নেই। ৭০/৮০ শতাংশ বাগানে নাম মাত্র থাকলে সেখানে প্যারাসিটামল আর নাপা ছাড়া কোন চিকিৎসা মিলেনা। চা নারী শ্রমিকদের সর্বরোগের ঔষধ প্যারাসিটামল।
প্রতিটি বাগানে শিশু সদন থাকার কথা থাকলে তা আছে মাত্র ৪০ শতাংশ বাগানে। ফলে ২ মাসের ছোট একটি বাচ্চাকে আরেকটি ৭/৮ বছরের বাচ্চার অধীনে রেখে কাজে যেতে হচ্ছে।
চা বাগানের নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছে এমন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসারে চা বাগানে নারীদের মধ্যে জরায়ূ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব বেশি।
‘নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম’ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্টানের আহবায়ক মারজিয়া প্রভা জানান, বিভিন্ন সময়ে ভায়া টেস্টের ফলে যে তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে বলা যায়, বাগান ভেদে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ নারী জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে প্রজনন স্বাস্থ্যের অবস্থা ভয়াবহ। দীর্ঘ আট ঘণ্টা প্রস্্রাব চাপিয়ে কাজ করতে হয়। পাতা তোলার সেকশনগুলোতে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই দেখে এভাবেই বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয় তাদের। এতে জরায়ু মুখ নেমে আসে। অধিকাংশ নারী এই সমস্যায় ভুগছে। এছাড়াও মাসিকের অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা, যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অজ্ঞতা তাদেরকে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চা বাগানে নারীদের গর্ভধারণের সংখ্যা অধিক। গর্ভবতী থাকা অবস্থায় একদিকে যেমন পরিমিত পুষ্টির অভাব, অন্যদিকে চা বাগানের কমিউনিটি ক্লিনিকে অনুন্নত ডেলিভারি ব্যবস্থা।
তবে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম এসব অভিযোগ অনেকটা স্বীকার করেই বলেন, চা চাষের গোড়াপত্তন থেকে এই জনগোষ্ঠীর কপালে জুটেছে শুধু অবহেলা-নির্যাতন। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি তাদের জীবনযাত্রায়। মাত্র কয়েকটি বাগানে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও বেশিরভাগ বাগানে তা নেই। তবে বর্তমান সরকার তাদের জন্য অনেক কিছু করেছে ।
বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান জি এম শিবলি জানান, গত কয়েক বছরে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা আছে তাও সমাধান হয়ে যাবে।

BBS cable ad

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: