ভোগান্তিতে মানুষ এক ইউনিয়নে ভেঙ্গে পড়ল তিন সেতু
রাসেল আহমেদ(ময়মনসিংহ):
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভেঙ্গে পড়েছে তিনটি সেতু। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি স্থানীয় প্রশাসনে। তবে, এ ঘটনায় দায় নিতে চাইছে না কেউ। দোষারোপ করছেন একে অপরকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকল্প প্রশাসন বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খনের কারণেই তিনটি সেতু ভেঙ্গে পড়েছে। এদিকে, স্থানীয়রা বলছেন পাইলিং না করে সেতু তৈরী করার কারণেই সেতু ধ্বসে পড়েছে। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড দায় নিতে চাচ্ছে না। চাপাতে চাইছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উপর।
গফরগাঁও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, পুর্ব টেকির চরের খালের উপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ সেতুটি ৫৪ লক্ষ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৬-১৭ অর্থবছরে, চর আলগী বুরাখালী খালের উপর ৪০ ফুট দৈর্ঘের সেতুটি ৩০ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৭-১৮ অর্থবছরর ও চর মছলন্দ গ্রামের খালে ৬০ ফুট দৈর্ঘের সেতুটি ৪৭ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৩-১৪ অর্থবছরে তৈরী করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, গত ২৮ মে সন্ধ্যায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে বোরাখালী খালের ওপর সাত বছর আগে নির্মিত সেতুটি। ২৫ মে রাতে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ভেঙে পড়ে। একদিন পর পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটিও ভেঙে পড়ে।
তিনটি সেতু সপ্তাহখানেক সময়ের ব্যবধানে ভেঙ্গে পড়ায় বোরাখালী, নয়াপাড়া, কুরতলীপাড়া, জিরাতিপাড়া, টেকিরচর, নিধিয়ারচর, হোসেনপুর উপজেলার বগা মারার চর, হাজিপুর, চরকাটাইল, মহেশকুড়াসহ আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
এ বিষয়ে পূর্ব টেকিরচর গ্রামের হালিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অপরিকল্পিত খননের কারণেই সেতুগুলো ভেঙে পড়েছে। গফরগাঁও ও হোসেনপুর উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুই পারের হাজার হাজার মানুষ।
বোরাখালী গ্রামের আবুল বাসার বলেন, সেতু তিনটি পাইলিং না করেই নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই সেতুগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে হাজার মানুষ। অপরদিকে সরকারের প্রায় দেড় কোটি টাকা খালের পানিতে ভেসে গেল। এর সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আনুমানিক দুই মাস আগে বোরাখালি খালে খননকাজ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতুগুলোর দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতু ও কালভার্ট ধসে পড়ে। যদি সেতুগুলোর পাশের মাটি না সড়ে যেত তাহলে হয়তো হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
এ বিষয়ে চর আলগি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি সেতু তৈরী করা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ভেঙ্গে পড়া সেতুগুলো পরিদর্শন করেছেন। আমাদের ধারণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খননের কারণেই সেতুগুলো ভেঙ্গে পড়েছে।
এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সেতুগুলো নির্মানের আগে বোরাখালী খালটি মরা ছিল, তেমন পানি ছিল না। ওই খালের উপর সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু, হঠাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই খালের দুই পাশে ৮ থেকে ১২ ফুট করে খনন করার কারণে পানির চাপে সেতুগুলো ধসে পড়ে। ধসে পড়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতু তিনটি পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, গফরগাঁওয়ে তিনটি সেতু ধসে পড়ার খবরটি শুনেছি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কেউ প্রমান করতে পারবে না, যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতু ধসে পড়েছে। সেতু যারা তৈরী করেছে তারা কোন নিয়ম না মেনেই তা তৈরী করেছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন গাফিলতি নাই। পানি উন্নডন বোর্ড সম্পুর্ণ নিয়ম মেনেই খাল খনন করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।