আটক মোটর ভ্যান, রিক্সা ও ইজিবাইক ফেরত পাওয়ার দাবীতে ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান
এমএ জামান (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরায় পুলিশের হাতে আটক মোটর চালিত ভ্যান-রিক্সা ও ইজিবাইক ফেরত পাওয়ার দাবীতে অবস্থান কর্মসুচি পালিত হয়েছে। খেটে হতদরিদ্র এসব চালকরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার দুপুরে এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন।ধুলিহরের ভ্যান চালক রজব আলী বলেন, ভ্যান চালিয়ে তার পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। সংসার চালানোর পাশাপাশি তাকে প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র ৭২৫ টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ফলে লকডাউন চললেও ভ্যান চালানো বন্ধ করেননি কখনো। পুলিশের ভয় উপেক্ষা করে গত ২২ জুন বাািড় থেকে বের হলেও দিঘির ধারে পুলিশ তার ভ্যানটি আটক করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়। শহরের কাটিয়া মাঠপাড়ার ডালিম হোসেন বলেন, শুক্রবার থেকে তার ব্যাটারি চালিত ভ্যানটি আটক আছে। অথচ অনেকে ভান ও ইজিবাইক সকাল থেকে শহরে ও শহরতলীতে চলছে। তাদের ধরেও বিশেষ ব্যবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আইন যদি হয়ে থাকে তবে সকলের জন্য একই আইন হোক। কারো বেলায় আইন আর কারো বেলায় বেআইন-এটা তো হতে পারে না। তাই ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ করতে এসেছি।শহরের ঝুটিতলার সুমন দাস জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও বোনসহ সাত জনের সংসার তাকেই চালাতে হয়। মাকে প্রতিদিন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঔষধ কিনে দিতে হয়। বেশি টাকা আয়ের জন্য ইজিবাইক নিয়ে ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকি। এক সপ্তাহ ধরে ইজিবাইকটি পুলিশের জিম্মায়। গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সাংবাদিক ও কমিশনারের কাছে গিয়েছিলাম। কাজ হয়নি। টিআই সাহেব এখন আর সাংবাদিক বা কমিশনারের ফোন ধরেন না। ফোন ধরে কনস্টেবল বলেন, স্যার ব্যস্ত আছে। যা বলার এসপি সাহেবকেই বলুন।একথা শুধু রজব আলী, ডালিম বা সুমনের নয়, অধিকাংশ আটক হওয়া হাজারো ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও ইজিবাইক চালকের কথা। তারা করোনা পরিস্থিতিতে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পরে বিশেষ বিবেচনার মাধ্যমে কাজের ব্যবস্থা করে তাদের জীবন জীবিকা চালানোর দাবি জানান।মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যারয়ের সামনে অবস্থান করাকালে মোটরচালিত ভ্যান, রিক্সা ও ইজিবাইক চালকেরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হুটকরে এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে গরিব মানুষগুলোর সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, করোনাকালীন চলমান লকডাউনে তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ তাদের কোন সাহায্য দিচ্ছেননা। এরই মধ্যে পুলিশ তাদের ভ্যান রিক্সা আটকে রাখায় তারা অনাহারে ও অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন। তার উপর তাদের ঋণের কিস্তিও টানতে হচ্ছে। তারা এ সময় অবিলম্বে তাদের ভ্যান-রিক্সা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানান।পরে তাদের অবস্থান কর্মসুচিতে এসে সাতক্ষীরার নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির তাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনে বিষয়টি পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার আশ^স্ত করলে তারা তাদের অবস্থান কর্মসুচি প্রত্যাহার করেন।