কামারপাড়া বেদেপল্লীতে সন্ধ্যার পর কি হয়?
ঢাকাস্থ উত্তরার কামারপাড়ায় প্রায় ১২০টি বেদে পরিবারের বসবাস। এখানে সবমিলে বেদে জনসংখ্যা ৩৫০ জনের মতো যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন সর্দার। এদের সবার স্থায়ী নিবাস মুন্সীগন্জের লৌহজং থানা এলাকায়, তবে জীবন-জীবীকার তাগিদে বেশিরভাগ সময় তাদের এই কামারপাড়াতেই কাটাতে হয়। কর্মব্যস্ত দিন শেষে সন্ধ্যার পর সকল নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের আড্ডায় মুখরিত হয় বেদে পাড়ার ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরের আঙিনা। এতো পরিশ্রমের পরেও তাদের মুখে হাসি লেগে আছে, কারণ বেদে জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে আমোদপ্রিয়। তারা অল্পতে তুষ্ট হতেও পছন্দ করে, মানুষকে ভীষণ সম্মান করে কথা বলতে পারে এবং আন্তরিকতারও কোনো ঘাটতি নেই তাদের।
এই বেদে জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই এখন কষ্ট করে নিজেদের সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের নাতি-নাতনিকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন যাদের অনেকেই বীণামূল্যে শিক্ষা উপকরণ পাওয়াসহ অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত মুন্সীগন্জের উত্তরণ শিক্ষালয়ে লেখা-পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, শিখছে কম্পিউটারও। ইতিমধ্যে এই জনগোষ্ঠীর অনেক ছেলে-মেয়ে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীতে যোগদান করেছেন, অনেকে আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া থেকে শুরু করে মূলধারার রাজনীতিতেও প্রবেশ করেছেন।
অচ্ছুত এই জনগোষ্ঠীকে সাড়ে চারশো বছরের গ্লানিময় জীবন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তৎকালীন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও সদ্যপদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উত্তরণ ফাউন্ডেশন। দির্ঘ আট বছর গবেষণার পর গত বছর বেদে জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা “ঠার” নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার বই লিখে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।