শিরোনাম

South east bank ad

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে

 প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সফলতার গল্প

ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চালিয়েছে বিশেষ অভিযান। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চালানো হয় চিরুনি অভিযান। ১০ দিনব্যাপী দ্বিতীয় ধাপের চিরুনি অভিযানও শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। এসব অভিযানের পাশাপাশি চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা। কোনো স্থাপনায় এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেলেই ভবন মালিকদের করা হচ্ছে আর্থিক জরিমানা। বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পেলেই দেওয়া হচ্ছে সতর্ক নোটিশ। এ ছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ৪০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে আবার শুরু হচ্ছে স্থানীয় গৃহবধূদের দিয়ে এলাকায় এলাকায় মশকনিধন কাজের তদারকি। এ ছাড়া নিয়মিত রুটিন কার্যক্রম তো চলছেই। এসব কারণে এবার এডিস মশার দেখা মিলছে না। গত বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থাকলেও রাজধানীতে কমেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এবার নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, যার সুফলও আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। বছরের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর তথ্য সরকারের নথিভুক্ত হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এইডিসবাহিত রোগ নিমূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত ডিএনসিসির মশক নিধন কার্যক্রম সন্তোষজনক মনে হয়েছে আমাদের। জনগণের অংশগ্রহণ এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশক বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম উপায় হলো অভিযান। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেক জরিমানাও করেছে। এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীর তেমন দেখা মিলছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোনো হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি। অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার সমকালকে জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ৩১৮ জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩১৪ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে তিনজন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) একজন চিকিৎসাধীন আছেন। এর পর আর নতুন কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে কোনো রোগী মারাও যাননি। গতবছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় সারাদেশে। সরকারি হিসাবে, পুরো বছরে ১ লাখের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ২৭৬ জনের। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য নগরবাসীর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। এমনকি দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নেও বিষয়টি প্রভাব ফেলে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, মশক নিধন কার্যক্রম সফল করতে এবার বছরের শুরু থেকেই জনসচেতনতায় জোর দিয়ে আসছেন তারা। আর এই কাজে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। মাইকিং, লিফলেট, পোস্টার, স্টিকার বিলিসহ ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধে মশা মরছে না- এমন অভিযোগ ওঠার পর গত বছরই কীটনাশক বদলে ফেলেছে ডিএনসিসি। আগের ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে। গত বছরের কথা মাথায় রেখে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করে ডিএনসিসি। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে তা নিশ্চিহ্ন করতে জুন থেকে শুরু করে ‘চিরুনি অভিযান’। এছাড়া পাঁচটি নগর মাতৃসদন এবং ৩৫টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ডিএনসিসি। এ পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে ১৭৫টি পরীক্ষা করে ৭ জন রোগী শনাক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে এ বছরের ৬ জুন থেকে ৫৪টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান চালায় ডিএনসিসি। ১০ দিন ধরে চলা ওই অভিযানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করা হয়। তার মধ্যে ১ হাজার ৬০১টি স্থাপনায় এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৮৯ হাজার ৬২৬টি স্থাপনায় এইডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পায় ডিএনসিসির কর্মীরা। ৫ জুলাই শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার অভিযানের প্রথম দুই দিনে ২৫ হাজার ৯১৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। তার মধ্যে ১৯০টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে ১৬ হাজার ৫৫৮টি স্থাপনায়। প্রথম দফার চিরুনি অভিযানে ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং দ্বিতীয় দফার দুই দিনে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে ডিএনসিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক নিধন কার্যক্রমে গত বছরের অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করতে তিনি ১২ জন কীটতত্ত্ববিদের একটি দল করেছেন। সেই সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সারাবছরই মশক নিধন কার্যক্রম তদারকির ব্যবস্থা রেখে তাতে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মশককর্মীদের হাজিরা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেব স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে। তারা মশককর্মীদের কার্যক্রম দেখে আমাদের জানাবেন। এতে কাজটি ঠিকমত হচ্ছে কি না নিশ্চিত হওয়া যাবে।
BBS cable ad

সফলতার গল্প এর আরও খবর: