South east bank ad

সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করতে পারবেন পোশাকখাতের বাইরের রফতানিকারকরাও

 প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   গার্মেন্টস/টেক্সটাইল

সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করতে পারবেন পোশাকখাতের বাইরের রফতানিকারকরাও

তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত নন-আরএমজি খাতের রফতানিকারকরাও সাব কন্ট্রাক্টে বা উপ-চুক্তির মাধ্যমে অন্য কারখানায় পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি উপ চুক্তির শর্তও শিথিল করেছে এনবিআর। এছাড়া আদেশ বাস্তবায়নে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।

সময়মত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও রফতানি আদেশ বাড়াতে রফতানি কারকদের এই সুযোগ দিয়েছে সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এমন উদ্যোগের ফলে রফতানিকারকরা নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ বা শিপমেন্ট করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সাল থেকে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিং সুবিধা চালু করা হয়। গত জুনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এই সুবিধা শুধু পোশাক খাতের জন্য বহাল রাখে। অন্য খাতগুলোর জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিং সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়। এতে নন-আরএমজি সেক্টর, বিশেষ করে চামড়া রফতানিকারকরা কাজের অর্ডার পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানকে সাব-কন্ট্রাক্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এনবিআরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। পোশাক শিল্পের মতো অন্যান্য রফতানি খাতকে সাব-কন্ট্রাক্টিং সুবিধা দেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জিডিপিতে পোশাক খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। পোশাক শিল্প সরাসরি ৩৪ লাখ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী রয়েছে। এর পরই জাতীয় অর্থনীতিতে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা (জুতা) শিল্পের অবস্থান। এটি একটি রফতানিমুখী শ্রমঘন খাত। বর্তমানে রফতানি বাণিজ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় আসে এ খাত থেকে।

বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে আরএমজি খাত থেকে। বাকি অংশ নন-আরএমজি খাত দ্বারা উৎপন্ন হয়। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে চামড়া, পাদুকা, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য শিল্প।

সাব-কন্ট্রাক বা উপ-কন্ট্রাক্টর হলো এমন একটি ব্যক্তি বা ব্যবসা যা অন্যের চুক্তির অংশ বা সব বাধ্যবাধকতা সম্পাদন করার দায়িত্ব নেয় এবং একটি উপ-কন্ট্রাক্ট হলো একটি চুক্তি যা একটি উপ-কন্ট্রাক্টরকে বিদ্যমান চুক্তির অংশ বরাদ্দ করে।

অনেক সময় একটি কারখানার যে পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে বেশি কাজের অর্ডার পায়। তখন এসব প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের একটি অংশ অন্য কারখানায় স্থানান্তর করে থাকে। এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি অনুশীলন।

সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ে জড়িত হওয়ার আগে প্রধান ঠিকাদার বা কারখানাকে অবশ্যই ক্রেতাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কারণ বিদেশী ক্রেতারা সর্বদা নিশ্চিত করতে চান যে সাব-কন্ট্রাক্ট করা প্রতিষ্ঠান কমপ্ল্যায়েন্সের বিষয়গুলো মেনে চলছে।

চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান বলেন, রাজস্ব বোর্ডের নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক উপকার হবে। এ সিদ্ধান্তের কারণে রফতানিকারকদের অর্ডার আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত করা এবং ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, অনেক সময় তাদের অন্য কারখানায় কিছু কাজ স্থানান্তর করতে হয়। এতে সময় মতো কাজ শেষ করা যায়। একইসঙ্গে নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণে সাহায্য করে। একইসঙ্গে অনেক রফতানিকারকের কাজের অর্ডারের ঘাটতি হলে তারাও সাব-কন্ট্রাক্টিং কাজ করতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।

পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অমৃতা মাকিন ইসলাম বলেন, নন-আরএমজি খাতের জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের অনুমতি দেওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ যা আমাদের রফতানি বাড়াতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, তারা এখন সময় মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারবেন। একইসঙ্গে রফতানি আদেশ বাড়ানোর জন্য অন্যান্য কারখানার মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্টে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পারবেন।

এনবিআরের আদেশ বাস্তবায়নে মোট ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- কন্ট্রাক্ট আইন ১৮৭২ অনুযায়ী উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে, উভয় উৎপাদকের হালনাগাদ নবায়িত ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স থাকতে হবে, উপ-চুক্তির জন্য রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

এছাড়া, প্রতিষ্ঠানে ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স বা বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর (বিন) স্থগিত থাকলে তারা উপ-চুক্তির কাজ করতে পারবে না বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরএমজি খাতের পাশাপাশি নন-আরএমজি সেক্টরে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে যাদের বন্ড লাইসেন্স আছে এমন উদ্যোক্তারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য উপ-চুক্তির শর্ত শিথিল করেছে রাজস্ব বোর্ড।

এনবিআরের সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়িত উপ-চুক্তিতে কারখানাগুলো এখন ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে কেবল আন্ডারটেকিং অথবা ইন্ডেনচার বা চুক্তিপত্রের মাধ্যমেই অর্ডার নিয়ে কাজ করতে পারবে। আগে আইনি বিরোধের ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানার মালিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হতো।

BBS cable ad

গার্মেন্টস/টেক্সটাইল এর আরও খবর: