ফসল রক্ষায় ৬৭ কোটি টাকার প্রকল্প
সুনামগঞ্জে ৩৮২টি হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ১২ উপজেলার বড় হাওরগুলোর ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এদিকে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে কৃষকেরা নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরাও নানা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ৩৮২টি বাঁধের প্রি-ওয়ার্ক জরিপ অনুযায়ী প্রাক্কলন তৈরির পর কর্ম এলাকার পরিচয় যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে দ্বিমত পোষণ করেছেন সভার সদস্যসহ হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা। এছাড়া দেখার হাওরের নামের বিকৃতি ঠেকাতে ‘ডেকার হাওর’-এর স্থলে ‘দেখার হাওর’ লিখতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নিয়ে সভা করতেও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের শুরুতেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে নানা প্রস্তাবনা দিয়েছেন কৃষকেরা।
বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রি-ওয়ার্ক জরিপ অনুযায়ী প্রাক্কলন তৈরি করে কত কিলোমিটার বাঁধ হবে কেবল সেটি উত্থাপন করেছেন। কোথায় কত কিলোমিটার কাজ হবে এবং কাজের এলাকার পরিচয় যেভাবে দেওয়া হয়েছে, নন টেকনিক্যাল কেউ বোঝার কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাধানগরের কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, বাঁধের কর্ম এলাকার নাম দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। যেমন বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরে গুরুত্বপূর্ণ হরিমণের বাঁধ। এটার কাজ হয় রাধানগর গ্রাম থেকে রায়পুর পর্যন্ত। এর পরিচয়ও সেভাবেই জানেন এলাকার মানুষ। এখানে কেবল কিলোমিটার না লিখে এলাকার পরিচয় উল্লেখ করা যেতে পারে।
জামালগঞ্জের চাঁনপুরের কৃষক সালাম মিয়া বলেন, ২০১৭ সালে ফসল ডুবিরপর কৃষকদের যুক্ত করে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হচ্ছে। কিন্তু এখানেও নানা অনিয়ম হচ্ছে। বিগত সময়ে অনেক কৃষকই কেবল নামে যুক্ত ছিলেন, কার্যত বাঁধের কাজ করেছেন তৎকালীন সরকার দলীয়রা। তারা মূলত ব্যবসা করেছেন। অকাল বন্যায় বাঁধ টিকবে কী না, এই চিন্তা করে বাঁধ হয়নি। এ কারণে যে বছর পানি আগে এসেছে, বাঁধ ভেঙে বা ডুবে গেছে ফসল। পানি যে বছর কম হয়েছে, সে বছরই কেবল বাঁধে ফসল রক্ষা হয়েছে। এ ধরনের দায়সারা কাজের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না আমরা। গণশুনানি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) করার দাবি জানান এই কৃষক।
জেলার শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বড় কৃষক ছত্তার মিয়া বলেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রি-ওয়ার্ক জরিপ অনুযায়ী যে প্রাক্কলন তৈরি হয়, তখনই মূলত সরকারি টাকার লুটপাটের ব্যবস্থা রাখা হয়। যেমন: যেখানে দুই লাখ মাটির প্রয়োজন, সেখানেই চার লাখ মাটির ইস্টিমেইটে যুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি ঠেকাতে হলে কাজের শুরু বা শেষে অন্য টেকনিক্যাল পারসন দিয়ে মাপজোখ করানো যেতে পারে।
তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে বিগত সময়ের মতো অর্থ লেনদেনের আলামত এবারো আছে। তিনি উপজেলায় বাঁধের কাজ মনিটরিং ও বাস্তবায়নের জন্য হওয়া কমিটিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের যুক্ত করার দাবিও জানান। কাজ আদায় এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য এটা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য তার।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বললেন, বাঁধের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী প্রি-ওয়ার্ক জরিপ করে প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কাজ শুরু বা শেষ করার পর অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টের টেকনিক্যাল পারসন দিয়ে মাপজোখ করলে সমস্যার কিছু নেই বরং জবাবদিহিতার ক্ষেত্র আরো বাড়বে। বাঁধের কাজের এলাকা আরো স্পষ্ট করে পরিচয় দিতে শনিবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সব এলাকায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কান্দা, গ্রাম বা ডোবা নাও পাওয়া যেতে পারে। প্রি-ওয়ার্ক জরিপ করার সময় এ রকম নাম-পরিচয় দেওয়ার মতো কোনো মানুষকে বাঁধের ভাঙন এলাকায় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।