কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় টালবাহানা পাবনা সদর হাসপাতালে

রনি ইমরান (পাবনা):
পাবনা জেলার প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার অন্যতম অবলম্ব পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্তরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। রোগী হাসপাতালে নিতেই ডাক্তারা বলে দেন রোগীকে অন্যকোথায় নিয়ে ভালো চিকিৎসা করান। এখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা নেই।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর পাবনায় কয়েকদিন থেকেই অসুস্থ বোধ করছিলেন মো. আব্দুস সালাম। শনিবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই রোগীর চিকিৎসা দেওয়া এখানে সম্ভব না।
মহামারী পরিস্থিতির শুরু থেকে এ হাসপাতালের ডাক্তারা বিভিন্ন ভাবে কোভিড রোগীদের সেবা দিতে অনীহা দেখায়।
গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১০০ শয্যা নিয়ে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছিল। রোগীর সংখ্যা কমে আসায় পরবর্তীতে শয্যা সংখ্যা কমিয়ে ৫০ করা হয়। বর্তমানে তা আরো কমিয়ে
কোভিড১৯ রোগীদের জন্য ৩০ টি শয্যা রাখা হয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সিলিন্ডার রয়েছে ১৩০ টি ও সাধারণ সিলিন্ডার রয়েছে ২১ টি যেভাবে কোভিডে আক্রান্ত বাড়ছে তাতে রোগীর চিকিৎসা কাজে তা অপ্রতুল মনে, করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন বলেন,মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেশি থাকে। গত বছর করোনা রোগীর চাপ কম থাকায় করোনা ইউনিটের কিছু অংশ অন্য রোগীদের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তবে সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে, প্রয়োজন হলেই করোনা রোগীদের জন্য আবারও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সালেহ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, গত এক বছরে পাবনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। রোগী শনাক্তকরণের জন্য পাবনায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই। এখনও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, উপসর্গ দেখে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট এখনো চালু হয়নি। যে কারণে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম না থাকায় কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আইসিইউ ইউনিটও চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া, আইসিইউ চালু করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি।
হাসপাতাল সূত্র দাবী করেন,২ মাসের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ পাওয়া যাবে। তখন আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে। আইসিইউ চালু করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
পাবনা জেলা স্বাস্ব্যবিভাগের তথ্য অনুযায়ী পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন
১৬ জন এবং জেলায় মোট কোভিড ১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১ শত ১৩ জন। এদের মধ্য মাত্র ৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।