South east bank ad

ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নেই প্রধান শিক্ষক

 প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

ঝালকাঠি  হরচন্দ্র সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নেই প্রধান শিক্ষক

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):

ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী হরচন্দ্র সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শুন্যতায় চলতি মাসের বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় রয়েছে বিদ্যালয়ে কর্মরতরা। দীর্ঘ ৩বছর যাবত প্রধান শিক্ষকের পদায়ন না থাকায় সিনিয়র শিক্ষক আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেন নকিব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজুকে ২৯মার্চ এক অফিস আদেশে হরচন্দ্র সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়। ১২এপ্রিল বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি ৫এপ্রিল থেকে যোগদান দেখিয়ে স্বাক্ষর করে। ১২এপ্রিল বিকেলে তড়িঘরি স্বাক্ষর করে দায়িত্বগ্রহণ না করায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেন নকিবকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের মৌখিক আদেশ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবরে তিনি একটি ছুটির আবেদন জমা দিয়ে যান। স্কুলের আয়-ব্যায় হিসাব রক্ষার জন্য চিঠি প্রেরণ, আয়-ব্যয় কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ, অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড় না করাসহ যোগদানের পরবর্তি কোন কার্যক্রম সম্পন্ন না করেই তিনি বরিশালে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন। বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কাগজপত্রের কোন ডকুমেন্টও তিনি রেখে যাননি অফিসে। এদিকে রমজানে শিক্ষক-কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে হতাশায় সময় কাটাচ্ছেন। এতে তাঁদের নিত্য-নৈমিত্তিক সংসারিক বাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খেঁাজ নিয়ে জানাগেছে, ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজু আগের কর্মস্থল ঝালকাঠি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আড়াই বছর ঠিকমতো ক্লাসে যাননি। এই শিক্ষক ১২এপ্রিল (সোমবার) বিকেল সাড়ে চারটায় যোগদান করে ৫এপ্রিল থেকে স্বাক্ষর করে আবারো ছুটি নেন। সাত দিনের জন্য কর্মস্থল ত্যাগের ছুটির আবেদনের মেয়াদ শেষ হয়ে ৩দিন অতিবাহিত হলেও পুনরায় বিদ্যালয়ে আসেননি। তিনি যে ছুটির আবেদন করেছেন, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় বিধি অনুযায়ী তিনি যোগদান করার পরই সয়ংক্রিয়ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব না নিয়েই ছুটির আবেদন করে বরিশালে চলে যান। আর যার কাছে তিনি আবেদন দিয়েছেন, সে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে দুই বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষক। এদিকে দায়িত্ব না নেওয়ায় বিধি লঙ্ঘন করে সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ না করেই বরিশাল চলে যান। ফলে আবারো জটিলতার সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২ এপ্রিল বিকেলে হোসনেয়ারা আরজু’র আগের কর্মস্থল ঝালকাঠি সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম, সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেন ও হোসনেয়ারা আরজু গোপনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি শিক্ষকদের ফোন করে হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী বিদ্যালয়ে আসলে তিনি গত ৫ এপ্রিল পেছনের তারিখ দেখিয়ে যোগদান করেন। পরে শিক্ষকদের অনুরোধে তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে ছবি তোলেন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে কয়েকজন ছবিগুলো তারিখ ও সময় উল্লেখসহ ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সিনিয়র এক শিক্ষক তাকে অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণ না করেই একটি ছুটির আবেদনপত্র আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনের কাছে দিয়ে বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে বরিশাল চলে যান। দায়িত্ব না নেওয়ায় ক্ষুব্দ হন কয়েকজন শিক্ষক। তবে বিধি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনিই এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। নিজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েও তিনি আবেদন করেন প্রধান শিক্ষকের কাছে, যে পদটি শূন্য। নিয়মানুযায়ী তিনি আবেদন করবেন বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালকের কাছে। অথচ নিয়ম ভাঙার মধ্য দিয়েই তঁার যোগদান পর্ব শেষ হয়।

এদিকে যে তারিখে তাকে যোগদান দেখানো হয়েছে, তঁার দুই দিন পরে অর্থাৎ ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেন প্রধান শিক্ষকের পদ এখনো শূন্য আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। কেন হোসনেয়ারা আরজুকে পেছনের তারিখে যোগদান করানো হলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীসহ সকলের মনে। আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেনকে বিধি লঙ্ঘন করে আবারো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ সাহা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় শূন্য রয়ে যায় পদটি। আগে থেকেই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য ছিল। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল শর্তসাপেক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেব দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনকে। ২০১৯ সালের ১৩ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহপিরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে চারটি শর্ত দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক অথবা জ্যেষ্ঠতম সহকারী প্রধান শিক্ষক যোগদান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এ আদেশের প্রদত্ত ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ নতুন যিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করবেন তিনিই দায়িত্ব পেয়ে যাবেন। হোসনেয়ারা আরজু দায়িত্ব পাওয়ার পরে নিয়মানুযায়ী তিনি বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব এবং ডিজি’র কাছে চিঠি পাঠাবেন। কিন্তু তিনি এসব কিছু না করেই সাতদিনে ছুটির আবেদন করেন অবৈধ প্রক্রিয়ায়। ৫ এপ্রিল যোগদান দেখিয়ে তঁার পক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেইল পাঠানো হয় ১২ এপ্রিল। প্রকৃতপক্ষে ১২ এপ্রিল বিকেলে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন, যা বিদ্যালয়ের সিটিটিভির ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে।

কেন তিনি পেছনের তারিখ দেখিয়ে যোগদান করলেন এ বিষয়ে জানার জন্য তঁার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল কলেও পাওয়া যায়নি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠালেও তিনি তার জবাব দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠির কপিটি নতুন যোগদানকারী সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে দিলেও তিনি তা পড়ে দেখেননি। এটা পড়লে, তিনি যদি ছুটিতেও যান তাহলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনকে অবৈধভাবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যই তিনি তড়িঘড়ি করে যোগদান করেন, আবার দ্রুত বরিশাল চলে যান। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের মাঝেও পড়বে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি তা ধরেননি।

BBS cable ad

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: