ঝালকাঠিতে ত্রানের জন্য হাহাকার, দিনভর অপেক্ষায় কর্মহীন মানুষ

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
প্রতিদিন সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদের সামনে জমছে অভাবী মানুষের ভিড়। ত্রাণে আশায় সরকারি এক অফিস থেকে ছুটছেন অন্য অফিসে। কখনো যাচ্ছেন বিত্তশালীদের বাড়ির সামনে। ঝালকাঠিতে কঠোর লকডাউনের মধ্যে আয় হারিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকা এসব মানুষের খবর রাখছেন না কেউই। গত বছর এই সময়ে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম থাকলেও এ বছর লকডাউনের মধ্যে অভাবী মানুষের পাশে দঁাড়ায়নি কোন বিত্তবান মানুষ।
অসহায় এসব মানুষের প্রশ্ন, লকডাউন-করোনায় কোন ক্ষুধা মানে না, তঁাদের পরিবারের অনাহারী সদস্যদের নিয়ে কোথায় যাবেন? পৌরসভার পশ্চিম ঝালকাঠি এলাকার নুর জাহান বেগম (৬০) করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের আগে বাসা বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন। কাজ না থাকায় এখন তঁার পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। গত দুই দিন ধরে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বসে ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এসময় কথা হয় তঁার সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, অন্যের বাসায় কাম করতে গেলে বাড়ির মালিক কয় করোনা-লকডাউন, এহন কামে আওয়া লাগবে না। এদিকে ঘরে চাউল নাই, বাড়িওয়ালা ঘর ভাড়া চায়। কোথায় যামু, সমিতির লোকজন কিস্তি চায়। ঘরের ৫ জন সদস্য তিনদিন ধইরা না খাইয়া থাহার মত অবস্থা। এজন্য আমি ডিসি স্যারের ধারে ত্রাণের লইগ্যা আইছি। শুধু নুরজাহান বেগমই নয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাসি বেগম (৪৫), প্রতিবন্ধী আবদুল আজিজ (৬৪), মায়া বেগমসহ (৭৩) শতাধিক খেটে খাওয়া অভাবী মানুষ ভিড় করেছেন একটু ত্রাণের আশায়। তঁাদের অধিকাংশই চল্লিশোর্ধ নারী ও স্বামী পরিত্যাক্তা বা বিধবা। তঁাদের সকলের চোখেই ক্ষুধা আর পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে।
তবে জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার সরকারিভাবে কোন ত্রাণ আসেনি। জানা যায়, সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করলেও গরীব মানুষদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু এর পরে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ এবং পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৪ দিন কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় ঝালকাঠির খেটে খাওয়া অভাবী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। প্রথম দিকে অনেকে পঁুজি ভেঙে খেলেও লকডাউনের নবম দিনে এসে মানুষ অভাব টের পাচ্ছেন। শহরের চঁাদকাঠি এলাকার মনির হোসেন (৪৫) বলেন, আমি গণপরিবহনে চাকরি করতাম। লকডাউনের মধ্যে আমাদের গাড়ি বন্ধ রয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। কেউ ত্রাণও দিচ্ছেন না। টিসিবির পণ্য কেনার সামর্থ্যও নেই। আর কিছুদিন গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। শহরের কলাবাগান এলাকার হাসি বেগম বলেন, ঘরে উপার্জনক্ষম আমি একাই। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। এখন মালিকের অবস্থাই খারাপ, আমাদের কাজে রাখতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলার উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর ঠিক এই সময়ের লকডাউনে সরকারি অনুদান হিসেবে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের মাধ্যমে জেলার ৫০ হাজার মানুষ ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু এ বছর সরকারিভাবে কোন ত্রাণ সহায়তা আসেনি। ব্যক্তি পর্যায়ে তেমন কোন ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগও নেই।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, লকডাউনে প্রতিদিনই পৌরসভার সামনে মানুষ ত্রাণের আশায় ভিড় করছে। এ বছর সরকারিভাবে কোন সহায়তা আসেনি। মানুষের জন্য কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমার পৌর পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার পরিবার যেভাবে পারছি মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি। প্রতিদিনই আমার কার্যালয়ের সামনে অভাবী মানুষেরা ভিড় করছে। তবে শিগগিরই মানুষের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই হাজার ৫০০ টাকা মুঠো ফোনের মাধ্যমে চলে যাবে বলে আশা করি।