South east bank ad

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

 প্রকাশ: ২২ মে ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

গত বছর আঘাত হানা সুপার সাইক্লোন আম্ফানের ক্ষয়-ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী। আম্ফানের এক বছরের মাথায় বাংলাদেশের দিকে এবার ধেয়ে আসছে পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হতে চলা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। আজ শনিবার রাত নাগাদ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে লঘুচাপ। যা পরবর্তীতে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ, এরপর ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এ রূপ নিতে পারে। আগামী ২৬ মে বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে গতিবেগ কম হলেও ২৬ মে ভরা পূর্ণিমার কারণে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসসহ বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

‘দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল’ বলছে, ‘ইয়াস’ নামটি দিয়েছে ওমান এবং শব্দটির উত্পত্তি পার্সি ভাষা থেকে। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘জেসমিন’। আর পার্সি ভাষায় Yass-এর উচ্চারণ ‘ইয়াস’। মূলত ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইডেট নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলো। ১৩ সদস্যের এই প্যানেলের প্রত্যেক সদস্য প্রতিবছর ১৩টি করে নাম প্রস্তাব করে এবং সেখান থেকে নির্বাচিত নামের একটি তালিকা তৈরি হয়। পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নাম নেওয়া হয়েছে পাকিস্তান থেকে। যার নাম হবে ‘গুলাব’।
২৬ মে হলো ভরা পূর্ণিমা। ফলে এদিন চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই অক্ষে অবস্থান করবে। চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত অভিকর্ষে ওই দিন উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক নিয়মেই ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার কথা বলছে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেল, বাকি সব মডেলই (আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি) নির্দেশ করছে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশের ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে।

অধিকাংশ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ও স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে এর মুখ সুন্দরবনের দিকে। তবে এই ঘূর্ণিঝড় যদি উত্তর-পশ্চিম অভিমুখ বদল করে তবে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মধ্যম মানের এ ঘূর্ণিঝড়টি প্রবেশের সময় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।

শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতরের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর ও পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পরবর্তীতে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ২৬ মে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছাতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২২ থেকে ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এসময় তা ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপে রূপ নেবে। পরে এই নিম্নচাপ ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কোন কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে তা আরও দুই-তিন দিনের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলো থেকে ৩ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, সাগর, বাসন্তী, গোসাবা এবং ডায়মন্ড হারবার এলাকায় এনডিআরএফ পাঠানো হয়েছে। কোভিড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত জেনারেটর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করার কাজ শুরু করেছে সেখানকার উপকূল রক্ষী বাহিনী।

অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রস্তুতি শুরু হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় কেবল গতকাল বিকালে সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দুর্যোগের আগে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, জেলায় ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আমাদের এক হাজার ৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম্পান যে পথে স্থলভাগে প্রবেশ করেছিল, প্রায় একই পথে (সাতক্ষীরা, খুলনা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল) দিয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি প্রবেশ করতে পারে। ২৬ মে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যদি বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হানে, তবে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে। বেড়িবাঁধের অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্থানগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাতে এখনো ৪ দিন সময় আছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো নিরীক্ষা করে জরুরি মেরামতের পদক্ষেপের আহবান জানান বিশেষজ্ঞরা।

BBS cable ad

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: