ছয় মাসের ব্যবধানে বদলে গেছে তালা থানার চিত্র
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
তালা থানার প্রবেশ পথে সাটানো হয়েছে “দালাল মুক্ত পরিবেশ গড়তে সহায়তা করুন, দালালদের তথ্য থাকলে তাহা নিম্ন বর্ণিত মোবাইল নাম্বারে অবহিত করুন” লেখা কয়েকটি পোস্টার। আমরা সাধারণত জানি থানা মানেই টাকা আর দালাল। টাকা আর দালাল ছাড়া থানায় কোনো কাজ হয় না।
এসকল ধারণা বদলে দিয়ে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে থানাব্যাপি শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরলাস কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানের নেতৃত্বে ও পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদের সার্বিক সহযোগিতায় একটি চৌকস টিম। তালা থানায় এখন সেবা নিতে আসা লোকজন টাকা ছাড়াই এখন সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ ও মামলা লেখা বা অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন।এমনকি তার নেতৃত্বে পুলিশের আচরণ যেমন পাল্টেছে, তেমন থানার চিত্রও বদলানো সহ ৬ মাসে ১৪২ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির মামলা রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। এতে আগের তুলনায় থানায় সেবার মানও বেড়েছে বলে ধারনা করছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ।
অফিসার ইনচার্জ(ওসি),র পরিচিত: কুষ্টিয়া জেলার কোর্ট পাড়া এলাকার এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশের আউট সাইট ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। চাকুরজীবনে সফলতার রাখায় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি একাধিকবার জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা মডেল থানা ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরে ২২ সেপ্টেম্বর তিনি বদলিসূত্রে সদর থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশে যোগদান পূর্বক তালা থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ৬ মাস আগে তালা থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
যোগদান করার ৬ মাসের তথ্য বিবরণে দেখা যায়, থানায় ১টি হত্যা মামলা,৫ টি চুরি মামলা,২টি ধর্ষণ মামলা ৫টি অপহরণ মামলা,নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ৯টি,মাদক মামলা ৩৭টি,সরকারী ভাবমূতি নষ্ট করে ষড়যন্ত্র লিপ্ত থাকার মামলা ১টি, সম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত মামলা ২ টি সহ নিয়মিত মামলা এবং অন্যান্য ধারায় মামলা হয়েছে ১০০ টি। মাত্র ৬ মাসে ১৪২ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির মামলা রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
এসকল মামলার ফলাফলে দেখা যায়, একটি খুন মামলার আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক জেল হাজতে প্রেরণ। ২ চুরি মামলায় ৩টি মটরসাইকেল উদ্ধার,মাদক মামলায় ৫ কেজি ২৬০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার,১২৫ পিচ ইয়াবা, অপহরণ মামলাসহ জিডির ভিত্তিতে ২৫জন অপহরিত ভিকটিম উদ্ধার সহ ১৩৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখতে ৫৫ টি সভা সমাবেশ করা হয়।
এই সচিত্র প্রতিবেদন করতে গিয়ে বিগত বছরের একই সময়ের তথ্য হলো, ১টি হত্যা মামলা,চুরি মামলা ৪টি,ধর্ষণ মামলা ১টি,অপহরণ মামলা ৫টি,নারী ওশিশু নির্যাতন মামলা ৬টি,মাদক মামলা ১৬টি,নাশকতা মামলা-১টি এবং অন্যান্য ধারার মামলা ৮৮টি সহ মোট মামলা রুজু হয়েছে ১২১টি মামলা।
থানার এমন চিত্র পরিবর্তনের বিষয়ে পুলিশিং কমিটির সাবেক সভাপতি সাংবাদিক মীর জাকির হোসেন বলেন, আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান অফিসার ইনচার্জ(ওসি) হিসেবে তালা থানায় যোগদান করার ৬ মাসের মধ্যেই সৃজনশীল ও যুগোপযোগী পরিকল্পনার ফলে থানা ও পুলিশ হয়ে উঠেছে এ উপজেলার মানুষের আস্থার ঠিকানা।তিনি এ থানায় যোগদানের পর থেকেই সাধারণ মানুষকে মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তালা উপজেলা জাপার সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুর ইসলাম বলেন, আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান ওসি হিসেবে তালা থানায় যোগদানের ৬ মাসের মধ্যেই তার সৎ চিন্তা ও আধুনিক রুচিশীলতার কারণে পুলিশের আচরণ যেমন পাল্টেছে তেমনি বদলে গেছে থানার চিত্র। সহজেই মানুষকে সেবা দিতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বজায় রাখতে লিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা সদালাপী, মিষ্টভাষী পরিচিত । তার আচরণ ও কাজকর্মে আধুনিক পুলিশের ছোঁয়ার পরিলক্ষিত আছে।
এবিষয়ে তালা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) নেতৃত্বে থানা এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৩টি ক্যাম্প সহ ৭ বিট পুলিশিংএ এক জন এসআই,একজন এএসআই নিযুক্ত আছেন। থানায় ৩৮ জন পুলিশ সদস্য,মাত্র ৪ জন এসআই ও ৪ জন এএসআই নিয়ে নিরলাস কাজ করে যাচ্ছি।থানায় প্রায় ৮০ ভাগ মামলা আসছে জমি সংক্রান্ত। ৯৯৯ এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ফোন আসে। ফোন কল পাওয়া মাত্র ভিকটিমের কাছে পৌছে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক করতে একটি গাড়ির সহ কিছু অতিরিক্ত পুলিশ প্রশাসনের প্রয়োজন আছে বলে আশা বাদ ব্যক্ত করেন ওসি।
ওসি আরও বলেন, আমি তালা থানায় যোগদান করার পর হতে পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদসহ সকল পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি এবং সেবা নিতে আসা সাধারণ জনণন যাহাতে সঠিক সেবা পান তাহার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। এবং থানায় এলাকায় দালাল, মাদক,সন্ত্রাস ও দূর্নীতি মুক্ত থানা গড়ে পতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নিরলাস কাজ করে যাচ্ছি।