ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে সাউথখালীর তিন গ্রামে
আবু নাঈম (বাগেরহাট):
বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের সুন্দরবন লাগোয়া তিন গ্রামের চার শতাধিক পরিবার জোয়ার-ভাটার সঙ্গে লড়াই করছে প্রতিদিন। মূল বেড়িবাঁধের বাইরে দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া, পূর্ব খুড়িয়াখালী ও শরণখোলার চাঞ্চলের এসব পরিবারে ঠিকমতো চুলা জ্বলছে না ঘূর্ণিঝড় ইয়ারে পর থেকে। ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় রিং বেড়িবাঁধ। সেই ভাঙা ভাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে শত শত ঘরবাড়ি, পুকুরসহ প্রায় ৫০০ একর ফসলি জমি নোলা জলে প্লাবিত হচ্ছে।
ভাঙন থেকে সোজা ১০০ফুট দুরেই জেলে মিরাজ তালুকদারের (৪৫) বসত ঘর। ওই ভাঙন থেকে হু হু করে পানি গিয়ে ঢোকে তার ঘরে। ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি থাকে জোয়ারের সময়। আবার নেমে যায় ভাটায়। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার-ভাটার সঙ্গে লড়াই করে টিকতে না পেরে তিনি আশ্রিত হয়ে আছেন পার্শ্ববর্তী এক আত্মীয়ের বাড়িতে। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ২০দিনেও ঘরে ফিরতে পারেননি মিরাজ।
মূল বাঁধের বাইরের বগী-শরণখোলা ভারাণী খালের পাড়ে রিং বেড়িবাঁধটি গতবছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভেঙে যাওয়ার পর সেটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হয়। সেই বাঁধটি আবার গত ২৬ মে ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায়। ওই ভাঙন থেকে জোয়ারের পানি ঢুকে শত শত ঘরবাড়ি-পুকুর প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় ৫০০একর ফসলি জমিতে নোনা পানি জমে আছে। চাষাবাদের মৌসুম শুরু হলেও তা করতে পারছেন না চাষিরা।
সোমবার সকাল থেকে সরেজমিন প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের ঘরে খাবার থাকলেও চুলা ভর্তি জোয়ারের নোনা পানি। যে কারণে রান্নবান্না বন্ধ। সবখানে শুধু পানি আর পানি। চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবারই মৎস্যজীবী। সে কারণে দিনের বেলায় বাড়িতে পূরুষদের তেমন দেখা মেলে না। জোয়ারের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বাড়ির নারী-শিশুরা।
দুর্ভোগে পড়া দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া গ্রামের জোহরা বেগম (৭০), রেনু বেগম (৫৫), মনির তালুকদার (৫০), দেলায়ার আকন (৫২), পূর্ব খুড়িয়াখালী গ্রামের নূপুর বেগম (২৮) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যে কি অবস্থায় আছি তা কেউ খোঁজ লয় না। ভোটের সময় আমাগো লাগে, কিন্তু এই বন্যায় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা আইজ পর্যন্ত কেউ আসে নাই। আমরা ডুইব্যা মরি, অথচ বান্দা (বাঁধ) মেরামতের কোনো ব্যবস্থা করে নাই।
ভক্তভোগীরা জানান, ২০দিন ধরে অনেকের চুলা জ্বলে না তাদের ঘরে। শুকনা খাবার খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রসাব-পায়খানায় যাওয়ারও উপায় নেই। গোসল, ধোয়াপালা সারতে হচ্ছে নোনা পানিতে। জমিতে গলা সমান নোনা পানি। চাষের সময় চলে এসেছে। কিন্তু মাঠে নমাতে পারছে না কোনো চাষি। দ্রুত রিং বাঁধ মেরামতের দাবি জানান তারা।
চালিতাবুনিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর খলিফা জানান, জোয়ারের পানিতে ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে অনেক পরিবারে। ভাঁধ মেরামতে অর্থ বরাদ্দের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিং বাঁধটি মেরামতে ইতিমধ্যে টেস্ট রিলিফ (টিআর) থেকে একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ভেঙে যাওয়া রিং বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।