পঞ্চগড়ে কর্মকর্তার ভুলে পেনশন বঞ্চিত পাউবো কর্মচারী
মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়) : মইন উদ্দীন আহাম্মদ (৮২) ছিলেন পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পাম্প চালক। দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরি করে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন। অবসরের ২২ বছরেও পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত তিনি। একজন কর্মকর্তার ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তাকে। নির্দেশনা থাকলেও যথাসময়ে চাকরি নিয়মিত না হওয়ায় এমনটা হয়েছে দাবি তার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করেও কোন ফায়দা হয়নি। এদিকে, সহায় সম্বলহীন মইনউদ্দীন আহাম্মদ বৃদ্ধ বয়সে এসে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মৃত্যুর আগে পেনশন সুবিধা পেতে চান। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মঈনদ্দীন আহাম্মদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। ১৯৬৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) সহকারী পাম্প চালক পদে যোগদান করেন তিনি। এর কয়েক বছর পর বদলি হয়ে আসেন পঞ্চগড়ে। তখন থেকেই পঞ্চগড় পৌর শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় পাউবোর নিজস্ব একটি কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়া অর্ধশত বছরের পুরনো তিন কক্ষ বিশিষ্ট কোয়ার্টারটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মেয়েদের পাত্রস্থ করেছেন অনেক আগেই। ছেলেরাও সংসার বেধে অন্যত্র অবস্থান করছেন। এই অবস্থায় অনেকটা হাত পেতে চলতে হয় বৃদ্ধ মইন উদ্দীনকে।
মইন উদ্দীন আহাম্মদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ সময় চাকরি করার পর ১৯৮০ সালে পনি উন্নয়ন বোর্ডের (ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেল) সকল পাম্প চালক ও সহকারী পাম্প চালকদের চাকরিতে নিয়মিত করা হয়। কিন্তু এক কর্মকর্তার ভুলের কারণে বাদ পড়েন তিনি।
মইন উদ্দীন আহাম্মদ বলেন, আমার নাম বাদ পড়ায় বহুবার পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে আবেদন নিবেদন করি। পরবর্তীতে বোর্ড পত্রের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেলের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলীকে আমার নাম বাদ পড়ার কারণ দর্শাতে বলেন। কারণ হিসেবে বোর্ডকে তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী বলেন যে, ‘সেই সময়ে অত্যাধিক কাজের চাপের দরুন নিয়মিত করণের তালিকা প্রস্তুত কাজে আলোচ্য কর্মচারীর নামটি সম্ভবত ভুলে বাদ পড়েছে’।
মইন উদ্দীন বলেন, পরবর্তীতে বোর্ড বরাবর আরো অনেক আবেদন নিবেদন করি। পরে আমাকে চাকরির প্রায় শেষ দিকে ১৯৯৮ সালে নিয়মিত করা হয়। প্রথমত ১৯৮০ সাল থেকে পরে ১৯৬৯ সাল থেকে বোর্ড আমাকে নিয়মিত গণ্য করেন। ১৯৯৯ সালে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর পেনশনের জন্য আবেদন করলে বোর্ড আমার চাকরির নিয়মিত করণের দপ্তরাদেশকে গুরুত্ব না দিয়ে পেনশনের পরিবর্তে এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা এককালীন গ্রাচ্যুইটি প্রদান করেন। যা মেয়েদের বিয়ে ও ঋণ পরিশোধে শেষ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে পেনশনের জন্য অনেক দৌঁড়ঝাপ করেও সুফল পাইনি।
তিনি বলেন, কর্মকর্তার ভুলের জন্যই সঠিক সময়ে চাকরিতে নিয়মিত হতে না পারায় আমি পেনশন বঞ্চিত হয়েছি। এখন কর্মকর্তার ভুলের মাশুল কি আমাকেই দিতে হবে? আর পেনশনের পরিবর্তে যদি গ্রাচ্যুইটিই দেয়া হবে তাহলে কেন বোর্ড আমাকে ১৯৬৯ সাল থেকে নিয়মিত করেছিলেন?
মইন উদ্দীন আরো বলেন, আমার নিজস্ব কোন সম্পদ নেই। সরকারী জায়গায় থাকি। আমার মৃত্যুর পর স্ত্রী-সন্তানেরা মাথা গুজবে এমন অবস্থাও তৈরি করতে পারিনি। এখন বার্ধক্যসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছি। সন্তানেরাও অস্বচ্ছল। প্রয়োজনীয় খরচ দিতে পারেনা। মানুষের কাছে হাত পেতে চলতে হয়। আমি এখনো আশ্বস্ত যে মৃত্যুর আগেই পেনশনের পুরো টাকাই পাবো। এজন্য মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফইজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ওই লোক আমার কাছে কখনো আসেনি। আসলে বিষয়টি দেখতে পারতাম।